×

সারাদেশ

এখনো হুমকি দেয়া হয়, আতঙ্কে আছি : হৃদয় মণ্ডল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২২, ০৯:২৭ এএম

এখনো হুমকি দেয়া হয়, আতঙ্কে আছি : হৃদয় মণ্ডল

হৃদয় মণ্ডল

মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ ১০ম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব রকমের চেষ্টা ব্যর্থ হলে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ১০ এপ্রিল হৃদয় মণ্ডল জামিনে মুক্ত হন।

বিজ্ঞানের এই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি আগামীতে চাকরি করতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কায়ও ভুগছেন। তিনি বলেন, আমি এখন সিসি ক্যামেরা ও প্রশাসনের নজরদারিতে আছি। কিন্তু বাসা থেকে স্কুল আর স্কুল থেকে বাসা- এটাই কি আমার জীবন? অন্য কাজের জন্য আমাকে বাইরে যেতে হবে না? তখন কিছু হলে কী হবে? এখনো আমার বাসার সামনে দিয়ে কিছু বখাটে ছেলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে যায়। তারা স্লোগান দেয়,‘মণ্ডলের চামড়া তুলে নেব আমরা’। কিছু দিন আগে ফোনে আমাকে হুমকি দেয়া হয়। ফোনে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘তোর একটা মেয়ে আছে না?’ এই ঘটনায় আমি থানায় জিডি করেছি।

ওই ঘটনার পর তার ক্লাসের পরিবেশও বদলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করে। আমি বুঝতে পারি তারা আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। ভয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসটাও মনোযোগ দিয়ে করাতে পারি না। আমাকে এখন ষষ্ঠ শ্রেণির মেয়েদের ক্লাস করাতে হয়। মেয়েরা বোরকা ও মাস্ক পরে ক্লাস করে। এটি বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে ওরা মাস্ক পরে কথা বললে অনেক সময় তা বুঝতে পানি না। কিন্তু মাস্ক খুলে কথা বলতে বলার কথাটাও আমি বলতে ভয় পাই। মাস্ক খুলে কথা বলতে বললে হয়তো ওরা বলবে আমি বোরকা খুলতে বলেছি। আমোদিনী পালের বেলায়তো আমরা এমনটাই দেখেছি। সত্যি কথা বলতে চাকরি করাটাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন অরাজক পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষকই ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। এর কারণ হচ্ছে দেশে গত ৫/১০ বছরে যত শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে এর অধিকাংশেরই মাজা ভাঙা। বিদ্যার জোর কম। মামা-কাকা কিংবা টাকার জোরে চাকরি পেয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানের কিছু দুষ্ট লোক আবার তাদের সঙ্গে জড়িত হয়। তখন তাদের টার্গেট থাকে যারা ক্লাসে পাঠদানে দক্ষ বা নিয়ম মেনে চলে তাদের সরানো। সংখ্যালঘু শিক্ষক হলে আরো সহজ হয় কাজটা। এক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতি একটা বড় হাতিয়ার হয়ে যায়। একটি মহল সত্য ঘটনা কী সেটি জানতে চায় না। দেখেও দেখে না। কিন্তু তাণ্ডব লাগিয়ে দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App