×

সারাদেশ

গুরুদাসপুরে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা শেষে বউমেলা শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০২:৩৪ পিএম

গুরুদাসপুরে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা শেষে বউমেলা শুরু

বুধবার শিধুলী এলাকার শিব মন্দিরের পাশে সিধুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

করোনা মহামারির পর আবারও শুরু হলো গুরুদাসপুরের শিধুলী গ্রামের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও বউমেলা। সম্প্রীতি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনই শতবর্ষ টিকিয়ে রেখেছে এই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে। যা আজো সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলমান রয়েছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। বাঙ্গালীর চিরায়তো এই ঐতিহ্যে যেন বিলীন না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার আহবান কর্তৃপক্ষের।

মেলা আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওই পূজা আর বউমেলা। বুধবার চড়ক পূজার শেষে আজ বউমেলার মধ্যদিয়ে দুইদিন ব্যাপী ওই ঐতিহ্যবাহী মেলার শেষ হতে যাচ্ছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখে শিবপূজা উপলক্ষে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী ওই গ্রামীণ মেলায় ছিল সব শ্রেণির মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের শিধুলী এলাকার শিব মন্দিরের পাশে সিধুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চড়ক পূজা ও বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল থেকে হাজড়া নাচের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে চড়ক পূজা শুরু হয়। দুই থেকে তিনজন পূজারীকে পিঠে বড়শি ফুটিয়ে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে পালাবদলে চড়কে করে ঘুড়ানো হয়। চলে সন্ধা পর্যন্ত। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ওই পূজা দেখতে সনাতন ধর্মের লোক ছাড়াও হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

মেলা কমিটির সভাপতি সত্য সরকার জানান, প্রায় তিন’শ বছর ধরে এটি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। তাই ঐতিহ্য বজায় রাখতেই প্রতি বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এ মেলায় চড়ক পূজা, কালী পূজা, শিবপূজা ও সর্বশেষ বউমেলার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।

মেলা দেখতে আসা রহিম মোল্লা (৭২) নামের এক বৃদ্ধ জানান, ছোট বেলা থেকেই বাবার হাত ধরে এই মেলায় আসি। দাদার মুখে শুনেছি তিন থেকে চার পুরুষের এই মেলায় সকল ধর্মের লোকের সমাগম হতো। এরআগে আরো বড় পরিসরে পুরাতন রীতি ও গ্রামের ঐতিহ্য বজায় রাখতে মেলা চলতো। সকলের মধ্যে আন্তরিকতাও ছিলো বেশ। এখন মেলার আকার অনেকটা ছোট হয়ে এসেছে। সমপ্রীতির মেলবন্ধনও আগের মতো নেই। তার পরেও ছোট বেলার অভ্যাস তাই দাঁড়িয়ে থেকে দেখছি।

উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাষ্টার জানান, চড়ক পূজা, কালি পূজা ও  বউমেলা দেখতে দুই-তিন আগ থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজনের আগমন ঘটে। এমনকি বউমেলা উপলক্ষে জামাইদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রতি বছর। জামাইরাও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে শশুড় বাড়িতে চলে আসে। তবে মেলায় ইউএনও এবং পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি থাকার কারনে সর্বোপরি সামাজিক মেলবন্ধনের কারনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনা। মেলাকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা রকমের ভ্রাম্যমান দোকান বসে। আজ বউমেলা শেষে ইতিটানা হবে ওই অনুষ্ঠানের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App