×

সারাদেশ

ঈশ্বরদীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেনারসি পল্লীর কারিগররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২২ পিএম

ঈশ্বরদীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেনারসি পল্লীর কারিগররা

ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে দিনরাত সমানতালে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেনারসি পল্লীর কারিগররা। ছবি: ভোরের কাগজ

করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দুই বছর লোকসান গুনতে হয়েছে বেনারসি পল্লীর। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এদিকে বেনারসি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী বেনারসি পল্লীর বেশীরভাগ কারখানাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি ব্যাগেজ পার্টি ভারত থেকে বেনারসি-কাতান আমদানি করায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়। দীর্ঘদিনের মন্দা ভাব থাকলেও এবারে ঈদকে সামনে রেখে ভালো ব্যবসার আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁতিরা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিরা বিভিন্ন সমিতি ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চালু করেছেন কয়েকটি কারখানা। স্বপ্ন দেখছেন ঘুরে দাঁড়াবার। এ বছরই প্রথম তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ৩২ জনকে ৪০ লক্ষ ২০হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে রকমারি ডিজাইনের বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজে মহাব্যস্ত বেনারসি পল্লীর কারিগররা। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তাই তাদের বসে থাকার কোনো উপায় নেই। দিনরাত সমানতালে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেনারসি পল্লীর কারিগররা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেনারসি পল্লী ঈশ্বরদী।

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসবে বাঙালি নারীদের নতুন কাপড়ের যোগান দিতে খটখট শব্দই যেন বলে দিচ্ছে কতটা ব্যস্ত এখানকার কর্মীরা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে শাড়ি বুননের কাজ। আর এ কাজগুলো চলে কয়েকটি ধাপে। শেষ পর্যায়ে এসে নারী-পুরুষের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় রং-বেরংয়ের হাজারও সুতোই হয়ে ওঠে একেকটি আকর্ষণীয় শাড়ি। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতে চাইবে অনেকের। বেনারসি শাড়ি তৈরি পল্লীর ব্যবসায়ী ও কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য উঠে আসে।

ভারতীয় নামী দামী ব্র্যান্ডের শাড়ির তুলনায় মানের দিক থেকে ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে উৎপাদিত বেনারসি-কাতান শাড়ির মান অনেক উন্নত। এখানে বিন্দিয়া কাতান, পিওর বেনারসি শাড়িতে বিশেষ কারুকাজ, আনারকলি ও ফুলকলি ছাড়াও নেট কাতান, পিওর কাতান, ওপেরা কাতান, কুচি জামদানি তৈরি হচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেনারসি পল্লী ঈশ্বরদী শহরের ফতেহ মোহাম্মদপুর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নিবন্ধিত ১৯৬ কারখানার কয়েক হাজার কারিগর তুমুল ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জাবেদ বেনারস জানান, ঈদকে সামনে রেখে এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার পিস শাড়ি উঠছে তাঁত থেকে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর বিপণী বিতানে এখানকার শাড়িগুলোই সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা আরও জানালেন, দেশের মধ্যে ঢাকা রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল ইত্যাদি জেলায় যাচ্ছে।

ঈশ্বরদী তাঁতী সমিতির সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর ওয়াকিল আলম জানান, এবার ঈদে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা ভালো। কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে।

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ওবাইদুল রহমান জিলানী বলেন, ঈশ্বরদীর ফতেহ মোহাম্মদপুরে বেনারসি পল্লীর তাঁতীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দু’বছর করোনার কারণে বেচাকেনা কম হলেও এবার ঈদে বেনারসির চাহিদা বেশি থাকায় কারিগররা দিনরাত কাজ করছেন। বেনারসি পল্লীর পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে নিজস্ব তাঁত রয়েছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, বেনারসি শাড়ির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ঈশ্বরদীর ঐতিহ্য এই বেনারিস শিল্প। এই শিল্পকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ৯০ টি প্লট দিয়ে ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর উদ্বোধন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App