×

সারাদেশ

চাষীর ৪ টাকার শসা হাত বদলে ৩০ টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০২:৩১ পিএম

চাষীর ৪ টাকার শসা হাত বদলে ৩০ টাকা

চাষীর ক্ষেত থেকে তোলা পরিপক্ক শশার স্তুপ

দিন-রাত পরিশ্রম আর মূলধন খাটিয়ে শসা উৎপাদন করেন চাষীরা। কিন্তু এক কেজি শসা বিক্রি করে একজন চাষী পাচ্ছেন মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকা। অথচ পাইকাররা দ্বিগুণ দামে এ শসাই বিক্রি করছেন আড়তে। আর আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতা হয়ে ক্রেতা অবধি পৌঁছতেই দাম যেন লাফিয়ে বেড়ে যায়।

রমজানের শুরু থেকেই শসার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও নায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের কৃষকরা। গত কয়েকদিনে দাম কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকায় প্রতি কেজি শসা কিনছেন। কয়েক হাত ঘুরে সেই শসা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। হাতবদলে এভাবে দাম বাড়লেও ন্যায্য মূল্যে পাচ্ছেনা চাষীরা। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বালিয়া মোড়ের শসা বাজার ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মিললো।

জানা গেছে, এ উপজেলায় শসা বাণিজ্য তুঙ্গে থাকলেও চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। শসা বাণিজ্যের লাভ চাষীদের ঘর পর্যন্ত না গেলেও মাঝখান থেকে লাভের টাকা পকেটে ভরে ফায়দা লুটছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই চাষীদের।

ফুলপুর পৌরসভা হাসপাতাল রোডস্থ ৩০০ গজ পথ এগুতেই শসা বাজার। শসার ভরা মৌসুমে বাজারটি জমজমাট। এছাড়াও উপজেলার ঠাকুরবাখাই, সাহাপুর, ভাইটকান্দি, বালিয়া সহ কয়েকটি স্থানেও রয়েছে ভ্রাম্যমান শসার বাজার।

প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানকার গুপ্তেরগাঁও, রগুরামপুর, রহিমগঞ্জ, পয়ারী, বালিয়া, ভাইটকান্দিসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা ক্ষেত থেকে পরিপক্ক শশা তুলে মাঠে স্তুপ করছেন। অনেকেই আবার সরাসরি স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসছেন। তাদের সঙ্গে মাপামাপির কাজ শেষ হতেই পানিতে ধুয়ে শসা বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বিকেলে ট্রাক, পিকআপে করে এ শসা চলে যাচ্ছে ঢাকা, ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।

পাইকার ও আড়তদারদের আসা যাওয়ায় বাজারটি সরগরম। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারটিতে গড়ে এক থেকে দের হাজার মণ শসা বিকিকিনি হচ্ছে।‘সালাদে শসার কদর যেমনি রয়েছে তেমনি পুষ্টিগুণেও এটি অনন্য। স্বল্প পুঁজি আর অল্প পরিশ্রম শসা চাষীদের সফলতার মন্ত্র। মঙ্গলবার স্থানীয় ফুলপুর উপজেলার এ বাজারটিতে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে পাইকার রাসেল মিয়া  (৪২) তিনি জানান, পাইকাররা চাষীদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ টাকা কেজিতে শসা কিনছেন আর ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে সেই শসাই বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। তার দাবি, বস্তা কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের পর লাভের এ অঙ্কটা খুব বেশি নয়।

এ পাইকারের সঙ্গে আলাপের সময়েই খানিকটা এগিয়ে এসে নিজের চাষী পরিচয় তুলে ধরলেন স্থানীয় পয়ারী ইউনিয়নের কালীবাড়ি গ্রামের আবুল কালাম (৪২)। তিনি জানান, এবার ৪০ শতাংশ জমিতে তিনি শসা চাষ করেছেন। জমি তৈরি, বীজ সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতি কেজি শসা তাকে বিক্রি করতে হয়েছে ৩-৪ টাকা দরে।

একই রকম কথা জানান রামভদ্রপুর গ্রামের চাষী আব্দুর রশিদ (৪৭), মামুদপুর গ্রামের রবিউল (৩৬), জমির উদ্দিন (৩৪) ও একই এলাকার শহিদুল ইসলাম। এসব চাষীদের লাভের গুড় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পেটে যাওয়ায় হতাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন, শসা চাষ এখন লাভজনক। কিন্তু চাষীদের রাত-দিন পরিশ্রম আর মূলধন খাটানো অর্থে উৎপাদিত এ সবজি’র লাভের টাকায় ফায়দা তুলছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী চক্র। বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদার পুরো সুবিধাই নিচ্ছেন তারা।

স্থানীয় শসা বাজারের এ চালচিত্র দেখার পর সরেজমিনে ফুলপুর বাস-স্টেশন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষীদের কাছ থেকে মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকা কেজিতে কেনা এ শসা হাত বদল হয়ে আঁড়ৎ আর পাইকারের হাত ঘুরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অফিসার মো. কামরুল হাসান কামু জানান, এ বছর ফুলপুরে শসার আবাদ হয়েছে ৩ সিজনে ৯০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন ৩২ থেকে ৪০ মেট্রিকটন। প্রতিকেজি শসার কৃষক পর্যায়ে গড়ে খরচ হয় প্রায় ৮-৯ টাকা। এ বছর শসার ফলনও ভালো হয়েছে। রোজার চাহিদা মাথায় রেখে অনেক কৃষক শসার আবাদ করেছেন। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম একেবারে কমে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App