×

সারাদেশ

গুরুদাসপুরে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গির চাষ করে বাজিমাত কৃষকের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০২:১৭ পিএম

গুরুদাসপুরে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গির চাষ করে বাজিমাত কৃষকের

গুরুদাসপুরের চলনালি এলাকার জমি থেকে বাঙ্গি তুলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ছবি: ভোরের কাগজ

নাটোরের গুরুদাসপুরে চলতি মৌসুমে রসুনে ন্যায্যমূল্যে না পাওয়া গেলেও বাঙ্গিতে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। দেশজুড়ে বেলে ও আঠালো বাঙ্গির কদর ও রমজান মাসকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বেঁচাকেনা। এতে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মূলত রসুনের জমির মধ্যেই সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গির বীজ রোপন করা হয়। রসুন উঠলেই বাঙ্গির গুটি আসা শুরু হওয়ার ৩ সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির চাষাবাদ হয়ে থাকে ধারাবারিষা ও নাজিরপুর ইউনিয়নে। এই অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় বাঙ্গি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধারাবারিষা ইউনিয়নের চরকাদহ, চলনালী, পাঁচশিশা সিধুলী, সোনাবাজু, উদবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামের জমিগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে বাঙ্গির। মাঠের পর মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে এসব বাঙ্গি। ফলনও ভালো সঙ্গে ন্যায মূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা। অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই ওই সব এলাকায় বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন ফল বাঙ্গির চাষাবাদ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তূর্ণ এলাকাজুড়ে তরমুজ ও মসলা জাতীয় রসুনের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাঙ্গি গাছের সবুজ লতা, পাতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি। পাশেই গাঁদা করে রাখা হয়েছে এসব বাঙ্গির স্তুপ। ওই অঞ্চলে উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হওয়ায় দেখতে ও খেতে সুস্বাদু হয়। এসব বাঙ্গি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকাররা নিয়ে বিক্রি করছেন।

বাঙ্গি চাষি মো. আসাদ আলী জানান, আকার ভেদে প্রতি একশ বাঙ্গি পাইকারী দামে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর চার বিঘা জমিতে রসুন ও বাঙ্গি চাষে ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় গড়ে সে চার বিঘা জমিতে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন। তবে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে তার চার বিঘা জমিতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লাভ হবে বলেও তিনি আশাবাদী।

অপর চাষি মিজানুর রহমান বলেন, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একসঙ্গেই আবাদ করা যায়। রসুনের জন্য সার দেওয়ায়, আলাদা করে বাঙ্গির জন্য সার দেয়া লাগে না। শুধুমাত্র বীজ ও ঔষধের খরচ ছাড়া বাড়তি খরচ হয় না।

নরসিংদী থেকে আসা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন, আব্দুর রশিদ, বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা জাফর ও ঢাকা থেকে আসা রতন কুমার বলেন, এই অঞ্চলের বাঙ্গি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাজারে চাহিদা রয়েছে। ক্যামিকেল না থাকায় অনেকেই বাঙ্গি পছন্দ করেন। প্রতি মৌসুমে আমরা এই এলাকার জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে আসি। ভালো যোগাযোগ ব্যাবস্থা থাকায় পরিবহনও সহজ ও সময় কম লাগে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, গুরুদাসপরে বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপশি বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহসহ সকল সুবিধা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষা হয়েছে এবং ৫৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App