×

সারাদেশ

বন্যহাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে রাত জেগে পাহারায় নালিতাবাড়ীর কৃষকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২২, ০৪:৪১ পিএম

বন্যহাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে রাত জেগে পাহারায় নালিতাবাড়ীর কৃষকরা

শেরপুরের নালিতাবাড়িতে সীমান্তবর্তী গ্রামের কৃষকরা বন্যহাতির আক্রমণ থেকে নিজেদের ক্ষেত্রে ফসল পাহারা দিচ্ছেন। ছবি: ভোরের কাগজ

বন্যহাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে রাত জেগে পাহারায় নালিতাবাড়ীর কৃষকরা

বন্যহাতির পাল

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি এলাকায় ফের বন্যহাতির আক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে বন্যহাতির আক্রমন থেকে চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ রক্ষায় বন্যহাতি আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকসহ এলাকাবাসী তাদের ফসল রক্ষায় গত কয়েক দিন ধরে মশাল জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এতে পাহাড়ি সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের আতঙ্কের শেষ নেই।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ৪০-৫০টি বন্যহাতির একটি দল ভারতের সীমান্তঘেঁষা পানিহাটার তালতলার জঙ্গলে অবস্থান করছে। বন্যহাতির এ দল প্রায় প্রতিদিন উপজেলার নাকুগাও ও পানিহাটা এলাকা দিয়ে নেমে আসছে ফসলের জমিতে। গত কয়েকদিনের অব্যাহত হাতির অত্যাচারে নাকুগাঁও ও পানিহাটার ফেকামারীতে ১০ জন প্রান্তিক কৃষকের সাড়ে ৫ একর বোরো আবাদের ফসল পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে হাতির দল।

নাকুগাও এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, আমি নাকুগাঁও স্থলবন্দরে শ্রমিকের কাজ করে বাবা-মাসহ ৫ জনের সংসার চালাতে হয়। ১৬ হাজার টাকা খরচ করে ১ একর জমিতে বোরো ধান ফলিয়েছি। গত সোমবার সন্ধ্যায় বন্যহাতির ওই পাল ক্ষেতে নেমে আমাদের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। বাকি ফসল রক্ষা করতে না পারলে আমাদের মহাবিপদ হবে।

একই এলাকার প্রান্তিক কৃষক আলিম উদ্দিন বলেন, ঋণ কইরা ১০ কাডা (কাঠা) (৪০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগাইছি। হঠাৎ কইরা হাতির পাল খেতে নাইমা পইড়া দুই কাডা জমি খাইয়া আর পাও (পা) দিয়া ফসল মাডির (মাটির) লগে মিশাইয়া ফালাইছে (মিশে ফেলেছে)। গ্রামবাসী সবাই মিলে ক্ষেত থাইকা (থেকে) হাতি সরানো অইছে (হয়েছে)। অহন রাইত জাইগা সবাই (এখন রাত জেগে সবাই) হাতি পাহারা দিতাছি (দিচ্ছি)।

[caption id="attachment_339583" align="aligncenter" width="700"] বন্যহাতির পাল[/caption]

পানিহাটা এলাকার কৃষক চানু, লিটন সাংমা ও মতি মিয়া বলেন, প্রতি মৌসুমে বন্যহাতির পাল আইসা আমগর ক্ষেত খাইয়া যায়। আমরা হাতির অত্যাচার থেকে কবে মুক্তি পাবো জানিনা। গতকাল রাইতেও ক্ষেতের ধানগুলো নষ্ট কইরা গেল হাতির পাল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও কয়েকজন কৃষক জানান, প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগে ৬০-৭০টি বন্যহাতি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতের বিএসএফ সদস্যদের বাধার কারণে হাতির দলটি আর ফিরে যেতে পারেনি। এরপর এসব হাতি দুই-তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে সীমান্ত এলাকায় এভাবে চষে বেড়াচ্ছে আর ফসলের ক্ষতি করছে। তারা যেকোনো সময় নাকুগাও এবং পানিহাটা এলাকার ফসলি জমিতে ও লোকালয়ে তাণ্ডব চালাতে পারে। তাই পাহাড়ি এলাকার মানুষ বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে চিৎকার করে রাত কাটাচ্ছে। নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন করায় পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকাতে ক্ষুধার্ত হাতির দল যখন রাগান্বিত হয়ে তেড়ে আসে তখন সাধারণ মানুষ পিছিয়ে যায়। এরা মাঝে মধ্যেই পাহাড়ি এলাকায় আক্রমণ করছে।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ৪০-৪৫টি বন্যহাতির দল উপজেলার তালতলার জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যার পর পর হাতির দলটি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ে ফসলী জমিতে নেমে পড়ে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App