×

সারাদেশ

উত্তরা গণভবনের ৫০ বছর পূর্তি আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৭ এএম

উত্তরা গণভবনের ৫০ বছর পূর্তি আজ

নাটোরের উত্তরা গণভবন

আবারো মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক দাবি

নাটোরের উত্তরা গণভবন। রাজধানীর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে উত্তরা গণভবন হিসেবে নামকরণ করেন। নামকরণের ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী আজ বুধবার। সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন উত্তরা গণভবনে অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারো মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের মাধ্যমে উত্তরা গণভবন নামকরণের সার্থকতা ও গৌরব ফিরিয়ে আনার দাবি নাটোরবাসীর।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নাটোরের উত্তরা গণভবন আঠারো শতকে দিঘাপতিয়া রাজাদের বাসস্থান হিসেবে নির্মিত হয়। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায় ১৭৩৪ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন প্রলয়ঙ্করি ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমোদ নাথ রায় সম্পূর্ণ প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি পুনর্নির্মাণ করেন। সে সময় চারদিকে সীমানা প্রাচীরবেষ্টিত ৪২ একর জমির ওপর রাজবাড়ীর ভেতর বিশেষ কারুকার্যখচিত মূল ভবনসহ ছোটবড় মোট ১২টি ভবন নির্মিত হয়। দিঘাপতিয়ার রাজপরিবার ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতে চলে যান। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে গভর্নর হাউস হিসেবে ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনী সেই ভবনকে তাদের উত্তরাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর নাম পরিবর্তন করে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে ঘোষণা দেন। এর ঠিক এক মাস পরে বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবনের মূল প্রাসাদের ভেতরে মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক করেন। সেই থেকে ভবনটি প্রধানমন্ত্রীর ২য় বাসভবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রাসেল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে সপরিবারে গণভবনে আসেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল উত্তরা গণভবন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত এবং এখানে মাঝে মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। ফলে এই উত্তরা গণভবনকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন আবর্তিত হবে। এরপর কয়েক দফা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী উত্তরা গণভবনে। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর কেটে গেছে ২৬টি বছর। কিন্তু আর কোনো মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক উত্তরা গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছরই উত্তরা গণভবনের নামকরণের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে ঘোষণা করার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আবারো উত্তরা গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আয়োজনের জন্য নাটোরবাসী দাবি জানিয়েছেন।

শাহিদা আঁখি নামে এক তরুণী প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আয়োজনের দাবি জানান। উত্তরা গণভবনের হিসাব সহকারী নূর মোহাম্মদ জানান, দীর্ঘসময় উত্তরা গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের দাবি জানিয়ে এলেও সেটি আর পূরণ হয়নি। ২০১২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে সংগ্রহশালা, মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়েছে। যেটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। উত্তরা গণভবনে আবারো মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক করে এটির গৌরব ফিরিয়ে আনা হোক। সেই দাবি সবার।

সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি পরিতোষ কুমার অধিকারী জানান, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি তথা উত্তরা গণভবনের পরিবেশ বঙ্গবন্ধুর কাছে খুব প্রিয় ছিল। সেজন্য তিনি এই স্থাপনাকে প্রধানমন্ত্রীর ২য় বাসভবন হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে তার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এখানে দুর্লভ প্রজাতির একটি হৈমন্তি গাছও রোপণ করেন। যা এখানো তার স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিবিজড়িত স্থান এই উত্তরা গণভবন। তাই অতীতের ঐতিহ্য রক্ষায় আবারো এখানে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আয়োজন করা হোক। এটা নাটোরবাসীর প্রাণের দাবি।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, উত্তরা গণভবন নামকরণের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ বছরই। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তাতে আগামীতে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App