যে কারণে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন জবি ছাত্রী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা সেক্সুয়াল অ্যাবিউজড ও নানাভাবে মানহানির শিকার হওয়ার কারণ উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি তার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী ও জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এ আত্মহত্যার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করে গেছেন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) ১০টার দিকে আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন অবন্তিকা। এরপর কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দেন তিনি। পরে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।
আম্মান অফলাইন-অনলাইনে নানা ধরণের চাপ ও ধমকের ওপর রাখতো অবন্তিকাকে। পরে সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার পাননি এমনটাও স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন তিনি।
অবন্তিকা তার স্ট্যাটাসে আরো বলেন, 'আম্মানের হয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। পরে সে আমাকে দেখে নেয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতিয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেছে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে।'
অবন্তিকা তার ফেসবুক পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, আম্মানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে প্রক্টর আমাকে বলে'... তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে? ' আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিলো। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়ার। তারা আমার জীবনটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।
স্ট্যাটাসে প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক হিসেবে জবির উপাচার্য সাদেকা হালিমের কাছে বিচারও চেয়েছেন অবন্তিকা । শেষে পোস্টে তিনি আরো উল্লেখ করেন, আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। ছাত্রী তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হিসেবে আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্যদের নাম উল্লেখ করেছে। মাননীয় উপাচার্য সাময়িকভাবে তাকে অব্যাহতি প্রদানের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।