×

রাজধানী

সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভায় বক্তারা

জাতিসত্তার অস্তিত্বের মর্মমূলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২১ পিএম

জাতিসত্তার অস্তিত্বের মর্মমূলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

ছবি: ভোরের কাগজ

বাঙালির অস্তিত্ব অনুসন্ধানের মূল-সুতোয় রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য বহুবার চেষ্টা হয়েছে। অনেক নেতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু পরিণতি লাভ করেনি। শেখ মুজিব হচ্ছেন সেই নেতা, যার ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে বাঙালি স্বাধীনতা ও মুক্তি লাভ করেছে। তাই বঙ্গবন্ধু শুধু সমসাময়িক নয়, অনাগতকালেও তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাঙালির অস্তিত্বের উৎস বঙ্গবন্ধু’  শীর্ষক আলোচনাসভায় এমন অভিমত প্রকাশ করেন বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা। মুক্তিকামী বাঙালির জীবনে বঙ্গবন্ধু যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাও উঠে আসে মুক্ত আলোচনায়। 

শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এ আলোচনাসভা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক বিশিষ্ট অভিনেতা ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মামুন আল মাহতাব সপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কবি মুস্তাফিজ শফি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খান, মেজর (অব.) আফিজুর রহমান আফিজ, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিব। 

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামল ছিলো চিরায়ত। এমনকি তার সময়ের সংবিধান, বাজেট, শিক্ষা ও সার্বিক কর্মসূচিতে সার্বজনীন চাওয়া-পাওয়া উপজীব্য হয়ে উঠেছিলো। তাই এদেশের মানুষের অস্তিত্বের উৎস শেখ মুজিব। কারণ তিনি মানুষের মুক্তির পর ভেবেছিলেন বাংলাদেশের সম্পদের সুষম বণ্টন প্রসঙ্গে। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। আর এ কারণেই একটি শক্তিধর রাষ্ট্র বিগত নির্বাচনে সার্বিকভাবে ষড়যন্ত্র করলেও গণমানুষের কাছে তা বিফল হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও চেতনা বাঙালির অন্তঃস্থলে প্রোথিত রয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ মুজিব ছিলেন সত্যিকারের নেতা, যিনি মানুষের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা জানতে পেরেছিলেন। এমনকি মানুষও বুঝতে পেরেছিলেন মুজিবের কথাই তাদের অন্তরের চাওয়া-পাওয়া। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সফল হয়েছিলো। নির্মম নির্যাতন সহ্য করে এদেশের মানুষদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্মের বহুমাত্রিক আঙ্গিক তুলে ধরে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। বর্তমান সময়ে তাই তিনি অতি প্রয়োজনীয় এবং অবিনশ্বর। বাঙালির জীবনে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এসেছেন, কিন্তু তার মতো কোনো নেতাই গণমুক্তির ভাবনা ভাবেননি। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনি শুধু মুখেই বলেছেন তা নয়, তিনি সংবিধানেও তা সংযোজন করেছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে পিতার ছোঁয়া কীভাবে স্পষ্ট পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় তা তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই আমাদের বলে থাকেন, যা-ই করতে যাই তাতেই দেখি আব্বার ছোঁয়া। প্রতিটি কাজ নতুন ভেবে শুরু করতে গেলেই দেখি বঙ্গবন্ধু সেটির সূচনা করেছিলেন। সুতরাং আসমূদ্রহিমাচল শেখ মুজিব সর্বকালে অনবদ্য এবং অনন্য।  

ইতিহাসের নানান আখ্যান তুলে ধরে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, বাংলায় অনেক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। কেউ কেউ সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছিলেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির জন্য। সবাইকে ছাপিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত। পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় তিনি মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন, বাঙালি জাতি হিসেবে আর যাই হোক, মনের দিক থেকে অনেক শক্ত। 

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মিলিত স্রোতধারায় সম্প্রীতির বাংলাদেশ অর্থনীতির উচ্চশিখরে ধাবমান বলে মনে করেন সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ঠাঁই নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কবি ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সাতচল্লিশে দেশভাগের পরই শেখ মুজিব ভেবেছিলেন স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা। আজকের শিক্ষা সংস্কৃতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তাকে সত্যিকারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও নিষ্ঠা তাদের জন্য শিক্ষা ও বিপ্লবের পরম আধার হয়ে উঠবে।

বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর (অব.) আফিজুর রহমান বলেন, আবহমান বাংলার চেতনায় ঋদ্ধ হলেই কেবল শেখ মুজিবের দর্শন বুঝা যাবে। এর জন্য চাই সর্বস্তরে জাতির পিতার কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়া। তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানেই বাঙালির অস্তিত্ব। আর এই অস্তিত্বের সঙ্গে যা কিছু আছে তার পেছনে বঙ্গবন্ধু। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী জয়শ্রী ব্যানার্জি, একুশে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সাইফ ইসলাম, কলামিস্ট তাপস হালদার, একুশের টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ড. অখিল পোদ্দার, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, ফকির আবু তালেব, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সংগঠক রাজিব কর প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App