পাঁচ দফা দাবিতে নীলদলের স্মারকলিপি
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১২ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া হামলা ও মারধরের ঘটনাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।
শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সব হত্যাকাণ্ড, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর হামলা, নাশকতা-ধ্বংসযজ্ঞের তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও র্যালি শেষে উপাচার্যকে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনটির নেতারা।
এসময় শিক্ষকরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও আহত-নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত সব শিক্ষার্থীদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তারা।
আরো পড়ুন: ফের সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ আন্দোলনকারীদের
বক্তব্য প্রদানকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতীয় সংকট উত্তরণের জন্য জাতীয় সংলাপ জরুরি। সেজন্য সরকারের উচ্চ মহল থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এ জাতি যে উচ্চতায় উপনীত হয়েছে, সেখান থেকে আমরা পশ্চাতে যেতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা জাতীয় সংকট। এটা একাডেমিক কোনো সংকট নয়। এই জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে পলিটিক্যাল স্থবিরতার কারণে। জাতীয় সংকট জাতীয়ভাবেই সমাধান করা প্রয়োজন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তারা কিন্তু জাতিকে আরেকটি শিক্ষা দিল এবং তারা ইতিহাসের একটি অংশ হল। ন্যায্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কীভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করতে হয়, সেটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রমাণ করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটল ১ জুলাই থেকে।
আরো পড়ুন: গণভবনের দরজা খোলা: প্রধানমন্ত্রী
এ সময় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমরা সবসময় কোটার যৌক্তিক সমাধান চেয়েছি। তবে তৃতীয় পক্ষ শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালনা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য ঘুরে উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাদের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। এর আগে মানববন্ধনে স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ আলী।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব প্রাণহানির ঘটনায় নীলদল গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের বিদেহী আত্যার শান্তি কামনা করছি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
নীল দলের পাঁচ দফা দাবিসমূহ হলো-
১. কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের অবিলম্বে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. আবাসিক হলগুলোতে বৈধ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩. আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিতকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।