মির্জা ফখরুল
ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮০ তম জন্মদিন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি। তারপরে যদি মনে করেন যে, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে তাহলে ভুল করবেন। এখন অত্যন্ত একটা ভাসমান অবস্থায় আছে। যেকোনো মুহুর্তে ভারতে বসে শেখ হাসিনা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। ইতোমধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।'
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আসুন আমরা সবাই সেই প্রতিজ্ঞাই আল্লাহ‘তালার কাছে করি, তিনি যেন আমাদের বিএনপির যে ভাবমূর্তি যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৈরি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তৈরি করেছে, তারেক রহমান সাহেব তৈরি করেছেন সেই ভাবমূর্তিকে সবাই অক্ষুণ্ণ রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি সেই ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা তরুণ-যুবক-ছাত্ররা তারা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে…বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে… আবু সাঈদ থেকে শুরু করে আরো অনেকে… প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে। ৩-৫ আগস্ট আমাদের বহু ছাত্র দলের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন ১২৪ জন ছিল। আমি খবর নিয়ে দেখলাম যে, সেখানে ৯০ জন হচ্ছে ছাত্রদলের ছেলে। কিন্তু কখনো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সকলকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে কমিউনালিজমের কথা বলছে না, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার এসব কথা বলছেন না…এটা একটা চক্রান্ত। এই কথা বলে ধোঁয়া তুলে তারা (আওয়ামী লীগ) আরেকটা ঝগড়া করতে চায়।'
আরো পড়ুন : অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সহযোগিতা করা হবে: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, ‘ আপনাদের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেক এলাকায় নিজের নিয়ে শান্তি বিগ্রেড তৈরি করেন, শান্তি বিগ্রেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সমস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, মন্দির, গির্জা এসমস্ত পাহারা দেবেন… তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, তাদের জীবন-মালের দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন ঈমানদার আলেম ছিলেন মাওলানা তমিজ উদ্দিন সাহেব… তিনি বাবরি মসজিদে হামলার সময়ে সবাইকে বলেছিলেন, যে দেশে সংখ্যালঘুরা আছে সেখানে সংখ্যাগুরুদের অর্থাৎ আমাদেরকে আমানত পবিত্র আমানত…. এই আমানত যে খেয়ানত করে সে আর মোমেন থাকে না….একথাগুলো মাথার ভেতরে সকলকে আনতে হবে এবং তাদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।' একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশ অনুযায়ী ‘প্রেস ও ভালোবাসা নিয়ে দেশকে সামনের দিতে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে’ বলে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্র-পত্রিকায় যে বিরূপ খবর দেখি তখন কিন্তু আমরা আতঙ্কিত হই। আবার কোন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে যে, জনগণের ভোটকে জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য আবার কোন নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কিনা। এ দিক থেকে সজাগ থাকতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ ঐক্য, ঐক্য, ঐক্যে এবং ধৈর্যশীল অবস্থা, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হবে। এই কথা বলছি এজন্য যে, আজকে ম্যাডামের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না? ক‘জন এসেছেন? কালকে আপনাদের প্রোগ্রাম ছিল না? ক‘জন আসছিলেন। সেভাবে আসে নাই…. অনেক কম, আজকেও কম। কি জন্য? জয় হয়ে গেছে?'
তিনি বলেন, ‘না এই যুদ্ধকে জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমরা কিন্তু অনেক বিপদে পড়ে যাবো। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছি আমরা। নব্য ফ্যাসিবাদ যেন না আসতে পারে তার জন্যে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।'
আরো পড়ুন : খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার….এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে… তাই না। জঞ্জাল জমা হয়েছে তো। এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। সেইভাবে কাজ করে আমাদের সংগ্রামকে জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের যে আদর্শ তাকে অনুসরণ করতে হবে, ম্যাডামের যে বক্তব্য তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।'
নয়া পল্টনে বিএনপির উদ্যোগে এই মিলাদ মাহফিলে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়াও অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক। ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে আজকে মহানগর-জেলা-উপজেলায় এই দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় এই দোয়া মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শাম্মী আখতার, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যু্ব দলের মোনায়েম সুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, উলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।