শ্যামল দত্ত
দেশে মোবাইল ব্যবহার করছে ১৪ কোটি মানুষ, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইডি আছে ৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষের। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ডিজিটাল যুগের অগ্রযাত্রা কতটুকু হয়েছে।
দিন দিন তথ্য প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা অকল্পনীয় পথে এগিয়ে চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চ্যাটজিপিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।
এর মাধ্যমে সংবাদ পাঠ করতে কোনো মানুষের দরকার পড়ছে না, যা ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখিয়েছে।
ভবিষ্যতে যেকোনো বিষয়ের উপরও নিউজ লিখে দিবে এটি। মূলত এই চ্যাটজিপিটি-এআই প্রযুক্তি গণমাধ্যমকে নতুন বাস্তবতায় ফেলে দিয়েছে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুমে ‘ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যম : অগ্রযাত্রা বনাম দায়িত্বশীলতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এসব কথা বলেন।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. এম. হান্নান ফিরোজের স্মরণে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ইউনিভার্সিটিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য (প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. এম. হান্নান ফিরোজের বোন) রিতা হক, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউনূস মিয়া, কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর কাজী আব্দুল মান্নান, সাংবাদিক ফোরামের কনভেনার মোশাররফ হোসেন মামুন প্রমুখ।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক ফোরাম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সাংবাদিক ফোরামের অর্থ সম্পাদক রাশেদ রায়হানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সভাপতি রায়হান খান আকাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাব্বির এবং সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে (বর্তমানে নামকরণ করা হয়েছে এক্স) মুহুর্তের মধ্যে যেকোনো খবর ছড়িয়ে পড়ছে।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুদ্রণ ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা। এখন কন্টেন্টের ভিউ দেখে রিপোর্টারকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। নতুন মাত্রা যোগ করেছে মোজো সাংবাদিকতা।
এক্ষেত্রে বলতে হয়, ভিউ সাংবাদিকতা বাস্তবে সাংবাদিকতা কিনা, সন্দেহ রয়েছে আমার। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, গোটা পৃথিবী এই ভিউয়ের মধ্যে চলে যাচ্ছে। এই তথ্য প্রযুক্তির উত্থানে ১০ বছর পর হয়তো কোনো পত্রিকা থাকবে না, ২০ বছর পর টেলিভিশন থাকবে না।
ডিজিটাল এই অগ্রযাত্রা কোথায় গিয়ে থামবে কারোরই জানা নেই। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তারও ঠেকানো সম্ভব নয়। এজন্য বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য ফ্যাক্ট চেকিংয়ে জোর দিতে হবে। যদিও ফ্যাক্ট চেকিং আমাদের দেশে এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি, তবে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, তথ্য প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ভালো ও খারাপ দুটি দিকই আছে। যদি খারাপের কথা বলি, ফেসবুকে নানা বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ানোয় বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশে সহিংসতা হতে দেখা গেছে।
বিশেষ করে ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে বগুড়ায় তাণ্ডব চালানো হয়, ২০১৪ সালে কক্সবাজারের রামুতে উত্তম বড়ুয়া নামে একজনের ফেসবুক আইডি থেকে কুরআন শরীফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দিয়ে ২৯টি বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়।
সেই ঘটনার পর থেকে উত্তম বড়ুয়া ও তার পরিবারের খোঁজ মেলেনি আজও। একইভাবে গুজব ছড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, সিলেটের শাল্লায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো হয়। ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে তাণ্ডব শুরু করা হয়। পরে ২২ জেলায় তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়েছিল।
অর্থাৎ যে মাধ্যমটিতে আপনি বা আমি চাইলেই যেকারো নামে আইডি খুলে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারি, সেটি কখনো গণমাধ্যম হতে পারে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা সেটি বিচার করার ক্ষমতা সবার থাকে না। আর এ কারণেই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। এই জায়গাটিতে বলতে চাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও আইনের কাঠামোতে আনতে হবে। যদিও আমরা এখনো ফেসবুক ও ইউটিউবকে সেই কাঠামোতে আনতে পারিনি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. এম. হান্নান ফিরোজের স্মৃতিচারণ করে শ্যামল দত্ত বলেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির এই ক্যাম্পাসটি আমার কাছে খুবই পরিচিত। ড. এম. হান্নান ফিরোজ ঘনিষ্ঠতম মানুষ হওয়ায় এখানে অনেকবার এসেছি। সাংবাদিকতার মুদ্রণশিল্পে যুক্ত থাকার পাশাপাশি তার সবচেয়ে ভালো গুণ ছিল সম্প্রীতির জায়গা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।