বাহারি সাজের ১২টি নৌকার অংশগ্রহণে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাখিমারা হাওরে দিনব্যাপী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌকা বাইচ দেখতে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নারী পুরুষ, কিশোর- কিশোরীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ সমবেত হয়েছেন। মন খুলে, নেচে-গেয়ে উপভোগ করছেন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
ঐ দেখা যায় জলের ঘাটে, কে বাঁশি বাজায়
ময়না লইয়া যায় রে আমার ময়না লইয়া যায়
অথবা
আজকে আমরা বাইচাল বাইমু মনেরও মতোন
দেখো, বাইচ খেলিয়া এবার মোরা জীবন করবো স্বার্থক রে
হাত ছাইড়া দেও সোনার দেওরা রে
এমন সব মন ভোলানো গানে তালে তালে নৌকা বাইতে থাকেন বাইচালরা। একটি নৌকায় চল্লিশ থেকে সত্তর জন বাইচাল থাকেন। নৌকার সামনের গলুইয়ে নৃত্যরত যুবক কিংবা বৃদ্ধ থাকেন একজন। তাদেরকে আমিন বলা হয়। গায়কের অমৃত রসের গানে, ঢোল ও বৈঠার তালে তালে নাচতে থাকেন নৌকার সামনের গলুইয়ে থাকা আমিন। কী অসাধারণ দৃশ্য। হাজারো মানুষের কণ্ঠে তার পক্ষের নৌকা জয়ের আকুতি। নিজেদের নৌকাকে জয়ী করতে প্রাণপণে বেয়ে যাচ্ছেন বাইচালরা। পাখিমারার হাওরে হাজার হাজার দর্শকের শত শত নৌকার উপস্থিতি। উল্লেখ করার মতো মহিলা দর্শকও আছেন হাওর পাড়ে ও নৌকায়। পরিবেশে ঐতিহ্যের সরব উপস্থিতি।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের পাখিমারা হাওরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচে দেখা যায় এমনই দৃশ্য। অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচের আয়োজন করেন বীরগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুব সমাজ।
সোনার তরী, বীর পবন, বীর বাংলা ও স্বপ্নের তরী এমন বাহারি নামে ৭টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে।
খেলায় প্রথম পুরষ্কার হিসেবে মোটরসাইকেল বিজয়ী হয় সলফের সোনার তরী নামের নৌকাটি। ২য় পুরষ্কার পায় খালপাড় এলাকার বীর পবন। তারা পুরষ্কার হিসেবে একটি ফ্রিজ পেয়েছে। ৩য় পুরষ্কার একটি এলইডি টিভি জিতে নিয়েছে ধলমৈশা গ্রামের স্বপ্নের তরী।
এর আগে দুপুর দেড়টায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সেন্টু, শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিতাংশু শেখর ধর সিতুসহ আরও অনেকে।
জগন্নাথপুরের তেলিকোনা গ্রাম থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসেন মো. আবিদুর রহমান। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি নৌকা দৌড় খুব পছন্দ করি। এখানে এসে তাদের আয়োজন দেখে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছি। এ ধরনের আয়োজন গ্রামাঞ্চলের বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের মানুষের মনে আনন্দের খোরাক যোগায়। এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক সবসময়।
বীরগাঁও গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতিবছর এমন আয়োজন করায় খুশি এলাকাবাসী। তারা বলেন, এর আগে মাদকের বিরুদ্ধে ফুটবল টুর্মামেন্টের আয়োজন ও সফল সমাপ্তি করে বীরগাঁও গ্রামের সুনাম অর্জন হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়েছে। নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা সফল হয়েছে। এজন্য এলাকার সকল খুশি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দাবি জানান তারা।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য নাহিদ আহমদ, শহিদ নূর আহমদ ও আহমেদ তুজু বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাটিকে সফল করে তুলতে। আমরা পেরেছি। কোনো রকমের আপত্তিকর ঘটনা ছাড়া আমরা সফল হয়েছি। চারদিকে পানি কমে যাওয়ায় প্রতিযোগী নৌকা কম হয়েছে। আরও বেশি নৌকা আশা করেছিলাম। তবে আমাদের আয়োজন সফল। আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।