সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই কর্মসূচি হবে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরাসহ আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপত আন্দোলনের সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
ঠান্ডাজনিত কারণে গলার ‘ভোকালে’ সমস্যার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে কর্মসূচি পড়ে শুনান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোড মার্চ হচ্ছে:
২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ)।
রোড মার্চে কোথায় কোন নেতা থাকবেন:
আগামী বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভৈরব-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেটে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দিবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোড মার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন মির্জা আব্বাস ও বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. আব্দুল মঈন খান।
২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান (গাবতলী), ড. আব্দুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (ফতুল্লা)।
২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ। এতে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বেগম সেলিমা রহমান। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন।
১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে রোডমার্চ। ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। ৩ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মিসরাইল ও চট্টগ্রামে রোডমার্চ।
ঢাকায় হবে সমাবেশ গুলো হচ্ছে:
১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানিগঞ্জ গাজীপুরের টঙ্গী, ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় সমাবেশ। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে।
সমাবেশে কোথায় কোন নেতা থাকবেন:
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা-কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশের মধ্যে কেরানীগঞ্জের সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান। টঙ্গীর সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান। আর উত্তরার সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই দিন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশুরোগ মুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালীতে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিন বাজারে সমাবেশ। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন নজরুল ইসলাম খান (নয়া বাজার), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান (আমিন বাজার)।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে জোট ও দলগুলো আছে তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। যতগুলো তারা তাদের মতো করতে করতে পারবেন সেটা তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করবেন। তারা হয়ত সবগুলো করবেন না। তারা তাদের মতো করে করবেন।
বিএনপির ঘোষিত কমসূচির মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারবে কিনা? জানতে চাইলে মিজা ফখরুল বলেন, আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেবে সেটা পরিস্থিতিই বলে দেবে।
তৈমুর আলম খন্দকার ও শমসের মোবিন চৌধুরীর তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান প্রসঙ্গ বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপি বাকশাল নয়, যে জোর করে বিএনপিতেই থাকতে হবে। তাছাড়া তৈমুর আলম এবং শমসের মোবিন চৌধুরী এখন বিএনপিতে নেই। তারা যেকোনো দলে যোগ দিতেই পারে।
তিনি বলেন, কতো খড় কুটো আসে যায়, তাতে বিএনপি কিছু আসে যায় না, এটাই বিএনপি।
ঘোষিত আন্দোলন কমসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, একটি অপশাসন বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিএনপি লগি-বৈঠা বিশ্বাস করে না। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সরকার মানবে কি মানবে না তাদের বিষয়। তবে তাদের নৈতিক পরাজয় হয়ে গেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণ কর্মসূচি অংশ নিয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বলেন, সবাই জানে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। এর বাইরে গিয়ে সরকার যদি জোর করে নির্বাচন করতে চায়, এর বিরুদ্ধে দেশের জনগণ ও বহিঃবিশ্ব রুখে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ‘এক দফা’ দাবিতে গত ১২ জুলাই বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, এনডিএম ও লেবার পার্টি যুগপৎ আন্দোলনে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে। এই পর্যন্ত যুগপৎভাবে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, পদযাত্রা প্রভৃতি কর্মসূচি দেয়। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ/ ৮ সেপ্টেমর ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।