×

অর্থনীতি

১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত ছাপাতে হতে পারে: ওয়েবিনারে গবেষকদের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৩, ০৯:৩৩ এএম

১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত ছাপাতে হতে পারে: ওয়েবিনারে গবেষকদের আশঙ্কা
প্রথাগত ঋণের উৎসগুলো সংকুচিত হয়ে আসায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত সমমূল্যের নোট ছাপাতে হতে পারে। শুধু মেগা প্রকল্প নয়, মূলত প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতেই টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। গতকাল বৃহস্পতিবার অনলাইনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিস আয়োজিত বাজেট ২০২৩-২৪ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল্যায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এসব কথা উঠে আসে। প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। প্রবন্ধে বলা হয়, বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার সাধারণত ব্যাংক ঋণ, বিদেশি ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু প্রথাগত এসব উৎস সংকুচিত হয়ে আসায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারকে ১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত সমমূল্যের নোট ছাপাতে হতে পারে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের আবর্তক ব্যয় ৮৬ হাজার কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এরমধ্যে কর্মচারী ও প্রশাসনিক খাতে ব্যয় ৩৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পের পেছনে ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মেগা প্রকল্প নয়, মূলত প্রশাসনিক ব্যয় মেটানোই এখন দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই খরচ মেটাতেই টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় ন্যূনতম ১ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করবে, টাকা ছাপানো ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে অর্থায়নের তেমন সুযোগ নেই। টাকা ছাপানোর বিপদ সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, টাকা ছাপিয়ে প্রশাসনের ব্যয় বাড়ার এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি অনিবার্য হবে, সাধারণ মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠবে। এতে টাকার মানের পতন ঘটবে ও প্রতিটি পণ্য এবং সেবায় দফায় দফায় মূল্যস্ফীতি হবে। ডলার রেশনিংয়ের কারণে সরকারি পণ্যে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা যাবে না। অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ব্যাংক খাত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সরকার নিজেই কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ঠিক হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন যদি না হতো তাহলে যেমন মানুষের আয় বাড়ত, তেমনি সরকারও ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল হতো না। মূল বিষয় হলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে, তা না হলে বিদেশি ঋণও আসবে না। সরকারের ব্যয় প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ছে, যা কমলে সরকারের ঘাটতিও অনেক কমে যেত। সেটা হলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রয়োজন কমত, সেই অর্থ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হলে বরং কর্মসংস্থান বাড়ত। কিন্তু এখন একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি, সেইসঙ্গে কর্মসংস্থান কম। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। সমাপনী বক্তব্য দেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো সাইমুম পারভেজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App