×

সাহিত্য

বাতিঘরের ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’ নাটকের মঞ্চায়ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ০৯:৪৮ পিএম

বাতিঘরের ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’ নাটকের মঞ্চায়ন

সময়ের স্রোতধারায় চলতি বছর প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পূর্ণ করছে বাতিঘর। সাফল্যের সে উদযাপনে ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’ আরেকটি শিরোনামের নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে বাতিঘর।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে দলের ১৬তম প্রযোজনা ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো দুই দিনের উৎসব। রচনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল।

নাটকের বিভিন্ন অংশে উঠে এসেছে মানুষের মনের এক অসীম ক্ষমতার উৎস। সেই ক্ষমতাবলে মানুষ নিজ বিশ্বাসকে যেমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, তেমনি অন্ধকারের অতলান্তিকে কোনো কালস্রোত প্রবল বেগে টলিয়ে দেয় তার প্রবল বিশ্বাসের ভিত।

প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, শাস্ত্র অনুযায়ী ঈশ্বরের কোনো রূপ নেই, কিন্ত তার ইচ্ছে আছে। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, আপনার ভেতরে একটা সত্তা আছে, যা আপনি দেখতে পান না। কিন্তু স্রষ্টা প্রতিনিয়ত আপনাকে দেখছেন যে আপনি পানি খাচ্ছেন, কথা বলছেন, হাঁটাচলা করছেন ইত্যাদি। এসব কিছু করতে গিয়ে আপনি নিশ্চয়ই অনুভব করেন আপনার গভীরে একজন ‘আমি’ বসবাস করে। আপনার বাহ্যিক আচরণের অনেক কিছুর সঙ্গেই রয়েছে সেই আমির দ্বন্দ্ব। আপনি হয়তো রাগে কোনো অসংলগ্ন কথা বলে ফেলছেন, অথচ আপনার ভেতরের সেই আমি চাইছে না সেই কথা বলুন।

এই আচরণের পরবর্তীতে অনুশোচনায় ভুগছেন। ভেতরের সেই চরম অনুভূতিশীল মানবিক যে সত্তা প্রতি মুহূর্তে আমাদের দেখে যাচ্ছে আমি তাকেই বলছি ভগবান। যে চোখ দিয়ে দেখছে না, দেখছে বিবেক দিয়ে। বিবেকের কণ্ঠস্বরই হচ্ছে ভগবানের কণ্ঠস্বর। সেই বাস্তবতায় ভগবান পালিয়ে গেছে কথাটি আক্ষরিক অর্থে ভগবানের পলায়ন নয়। এটা আমার আমির পলায়ন। দিনে দিনে আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব সত্তা থেকে বিবেক ও মানবিকতাকে হারিয়ে ফেলছি।

নাটকের কাহিনীতে উঠে এসেছে মানুষের মনের অসীম ক্ষমতার চিত্র। সেই ক্ষমতা দিয়ে মানুষ তার বিশ্বাসকে যেমন খোলামনে প্রশ্ন করতে পারে, তার চেয়েও সহজে নিজ বিশ্বাসকে সীমাহীন অন্ধকারে তলিয়ে দিতে পারে। ঈশ্বর বিশ্বাস, ভূত-প্রেত বিশ্বাসসহ সকল বিশ্বাস এই একই বৃন্তে হাজার কুসুমের ন্যায় একে অন্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে যুগের পর যুগ বেঁচে থাকে। সময়ে সময়ে বিশ্বাসের পাত্র বদলালেও রূপ বদলায় না। অসহায় ও দুর্বল মানুষের আশ্রয়স্থল অর্থাৎ বিশ্বাস নিয়ে চলে এক শ্রেণির মানুষের ব্যবসা।

লোভী, স্বার্থপর, সুযোগসন্ধানী এই মানুষগুলো সাধারণ মানুষের নিশ্বাস নিয়ে খেলা করে। তারা চায় না অন্ধকারে জ্ঞান প্রদীপের প্রজ্বালন ঘটুক। অন্যদিকে যেহেতু মানুষের আশ্রয় প্রয়োজন তাই ধর্ম তাকে খুঁজে নেয় অথবা মানুষ খুঁজে নেয় ধর্ম। অতঃপর আত্মা মরে যাওয়া মানুষগুলো নিজ স্বার্থে তৈরি করে বিশ্বোসের এক একটি ভয়ংকর খোড়ল; যেখানে থাকে না পালাবার পথ।

প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদ্দাম রহমান, ফয়সাল মাহমুদ, সঞ্জয় গোস্বামী, নুছরাত ইমাম বুলটি, ইয়াসির আরাফাত, সুইটি হোড়, সুমন স্মরণ, মৃধা অয়োমী প্রমুখ। পলাশ হেনড্রি সেনের আলোক পরিকল্পনায় মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন চারু পিন্টু। ফেরদৌসি আকতারের পোশাক পরিকল্পনায় কোরিওগ্রাফি করেছেন শিশির সরকার।

২০১১ সালের ১১ জুন যাত্রা করা বাতিঘর থিয়েটার বিভিন্ন সময় মঞ্চে এনেছে বিবিধ বিষয়নির্ভর ১৫টি প্রযোজনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App