×

জাতীয়

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্যক্তকরণ প্রতিরোধে ১৭ দফা সুপারিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ০৮:২০ পিএম

যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্যক্তকরণ প্রতিরোধে ১৭ দফা সুপারিশ

প্রতীকী ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে ১৭ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

বুধবার (৭ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন: বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্যক্তকরণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম; স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবুননেসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন; সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি ড. ইয়াসমিন হকসহ সভার মুক্ত আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ আমরা পুরো সমাজেই দেখে থাকি। নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু হয়েছে তা এখন দেখার সময় এসেছে। এখানে কাঠামোগত কিছু বাধা আছে যা আমরা অতিক্রম করতে পারছি না।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির ঘটনায় অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

অধ্যাপক ড. জেবুননেসা বলেন, অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদান নিশ্চিতের ব্যাপারে কমিটির সদস্যদের ও রাজনীতিসহ অন্যান্য প্রভাবমুক্ত হতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার্থীরা নন বরং যারা সমাজ গড়ার কারিগর, নতুন প্রজন্ম গড়ার কারিগর, সেই শিক্ষক সমাজের কিছু সংখ্যক শিক্ষকও এই অপরাধের সাথে যুক্ত। শুধু নারী শিক্ষার্থীরা নন, নারী শিক্ষকরাও যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানির শিকার হন। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করে এসময় বলা হয় অন্যায়-অনাচার-নির্যাতনের ঘটনার বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করছে ও আরো বর্বরতার ঘটনার উন্মেষ ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষকসহ সব স্তরের, সব পেশার, সব বয়সের নারীরা নিপীড়ন-নির্যাতন-অন্যায়-অনাচারের প্রধানতম শিকার। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করে মহিলা পরিষদ।

সভায় সুপারিশগুলো হলো: সন্তানের বেড়ে উঠা ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের যথাযথ ভুমিকা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া। উত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের সচেতন করা। উত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ- সেটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে অভিযোগ কমিটি গঠন, কার্যক্রম পরিচালনা এবং কমিটির কাজ মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর বাতিলকৃত ধারা ১০(২) পুনর্বহাল করা। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং এই নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন দেয়া।‌ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে উত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে পৃথক আইন পাশসহ আইনের বাস্তবায়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমুলক, সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমে নারীদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা। গণমাধ্যমে উত্ত্যক্তকরণ তথা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে যৌথভাবে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় হওয়া। শিক্ষা ব্যবস্থাকে জেন্ডার সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকারের বিষয় যুক্ত করা। সমাজের প্রচলিত, গৎবাঁধা নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা। সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণসহ নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শক্তিশালী করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App