×

মুক্তচিন্তা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির নতুন নতুন লবিস্ট তৎপরতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:১৭ এএম

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত বাংলাদেশের ওপর মার্কিন প্রশাসনের কোনো না কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য লবিস্টদের তৎপরতা যেন বেড়েই চলছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লবিস্ট বিনা পয়সায় কাজ করেন না। গণতন্ত্রের প্রতি বুঁদ হয়ে বাকবাকুম পায়রার মতো ওয়াশিংটনে তারা এই ডাকাডাকি করেন না। যেসব কংগ্রেসম্যানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন তারা, কিসের বিনিময়ে বা কেন করেন তা তারা ভালো জানেন। গত মাসে মার্কিন ভিসানীতির একটি টুইটবার্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন প্রকাশ করেছিলেন। সেটির পেছনে কোনো লবিস্ট হাউস কাজ করেছে কিনা আমরা জানি না। তবে সেই ভিসানীতি নিয়ে এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে শোরগোল লেগেই আছে। বিরোধীরা এটিকে তাদের বিজয় মনে করছে, সরকার বেকায়দায় পড়েছে। সুতরাং শেখ হাসিনার সরকারকে কাবু করতে হলে মার্কিনিদের একটি ছোটখাটো টুইটবার্তা হলেই যেন কেল্লাফতে। তবে ভিসানীতির বিষয়টি নিয়ে গত দুই সপ্তাহ দেশের রাজনীতি সচেতন মহল পরিষ্কার বুঝেছেন যে এই মার্কিন ভিসানীতির আওতায় কেবলমাত্র সেইসব ব্যক্তি পড়তে পারেন যারা আগামী নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন কিংবা নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু হতে কোনো না কোনোভাবে বাধা প্রদান করবেন। এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট। এমন বাধাদানকারীদের চিহ্নিত করে মার্কিন ভিসানীতির আওতায় আনা মোটের ওপর সহজ কাজ হবে না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হোক এটি সবারই চাওয়া ও প্রত্যাশার বিষয়। কোনো নির্বাচনই বিতর্কিত হোক সেটি কোনো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ চাইতে পারে না। তবে নির্বাচনের বিষয়টি সরল অঙ্কে চলে না। সেখানে সবাই গণতন্ত্রের খুব সাধুসন্ত নন, জয়ের জন্য প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, অর্থ বিতরণ, ধর্মের অপব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদিকে ব্যবহার করার নজির আমাদের দেশে অতীতে কতটা ব্যাপকভাবে ঘটেছে সেটি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচনে জিততে না পারলে কিংবা প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনে নির্বাচন বর্জন, প্রতিহত এবং বিতর্কিত করার সব ধরনের অপকৌশল অনেকেই প্রয়োগ করে থাকেন। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ইতিহাসটা আমাদের জন্য সবসময় সুখকর হয়নি। আমাদের দেশে নিকট অতীতের দুটি নির্বাচন নিয়ে অনেকেই মাঠ গরম করেন। কিন্তু তারাই ২০০৬ সালে নির্বাচন নিয়ে কি করেছিল সেটি বোধহয় গিনেজ বুকেও কুখ্যাতির জন্য স্থান করে নিলে কম বলা হবে না। আগেরও অনেক নির্বাচনেই অনেকভাবে অনেকে প্রভাব বিস্তার করেছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে দেয়নি। এ বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পৃথিবীই কমবেশি জানে। তারপরও আমরা আশা করব আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়। গত ২৫ মে মার্কিন ৬ জন সিনেটরের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে দেয়া হয়েছে বলে ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেয়েছে। সিনেটররা হলেন- স্কট পেরি, বব গুড, ব্যারি মুর, টিম বুরচেট, ওয়ারেন ডেভিডসন ও কিথ সেলফ। এরা সবাই রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসম্যান। তাদের নামে যাওয়া চিঠির বক্তব্যটি বেশ দীর্ঘ। এই বক্তব্য রচনায় কোনো কোনো লবিস্ট ফার্ম কাজ করেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে জার্মানভিত্তিক স্টেট ব্রডকাস্টার ডিডব্লিউ (উড) এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ নামে যে দুটি সংস্থার কথা বলা হয়েছে তারা বাংলাদেশেরই সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত বলে দীর্ঘদিন থেকেই দেশ-বিদেশে পরিচিত। সিনেটরদের নামের চিঠিতে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ থাকায় বুঝতে বাকি থাকেনি থলের বিড়ালটি কালো না সাদা, নিরীহ নাকি আক্রমণাত্মক। তাদের প্রচারিত বেশ কিছু ভিডিও ইউটিউবে দেশ-বিদেশে সরকারবিরোধী মহল ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা দেশের সামরিক বাহিনী, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি নিয়েও অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য সংযোজন করে আন্তর্জাতিক ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। সুতরাং ৬ সিনেটর তাদের উদ্ধৃত করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের শান্তি মিশনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে এখনই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার যে আহ্বানটি জানিয়েছেন সেটি আসলে নেত্র নিউজেরই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তখন বুঝতে বাকি থাকে না, এই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী লবিস্টদের পেছনে বেশ অর্থকড়ি খরচে দারুণভাবে লিপ্ত রয়েছে। তা তারা করুক। তাদের হয়তো অনেক অর্থ আছে। সেই অর্থ খরচ করে কংগ্রেসম্যানদের দিয়ে যে আবেদনটি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন সেটিই হয়তো তাদের বড় সান্ত¡না! মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী করবেন কী করবেন না, কী সিদ্ধান্ত নেবেন, কী নেবেন না- সেটি প্রেসিডেন্ট ও গোটা সরকারের বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের এখনো ৬-৭ মাস বাকি আছে। নির্বাচন কেমন হয়, তার ওপর নির্ভর করে কেবল একটি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না নেয়ার প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু নির্বাচনটিই এখনো হয়নি। তার আগেই মার্কিন প্রশাসন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন বোধহয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের শান্তি মিশন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখনো সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশ শান্তি মিশনের কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট খুশি, বেশ কিছু পুরস্কার বাংলাদেশের শান্তি মিশনের সৈন্যরা লাভ করেছেন। আমাদের অনেক সদস্য শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এ সম্পর্ক সবাই জানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কম অভিহিত নয়। আমাদের দেশের কোথাকার কোন নেত্র নিউজ বিদেশে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে প্রভাবিত করার জন্য যা খুশি তা প্রচার করবে। তাতেই সবকিছু হয়ে যাবে, বিষয়টি এতটা সহজ ভাবার কোনো কারণ নেই। ৬ কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠিতে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরকম শত শত দলিল তারা আছে বলে উল্লেখ করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্ধৃত করে এই সময়ে দেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, সাংবাদিক, প্রতিপক্ষকে হত্যা, গুম, জেল প্রদান করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা শুধু তার প্রতিপক্ষকেই নয়, নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকেও হত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতন করেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দেশে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তাদের বাড়িঘর, মন্দির লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ এমনকি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদেরও একই অবস্থায় পড়তে হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবাধ নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে আক্রমণ এবং মিছিলকারীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন এমনকি হত্যাও করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। র‌্যাবকে সরকারি হত্যাকারী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে র‌্যাবের ওপর সেটির কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। সেই নিষেধাজ্ঞার অনুসরণে ৬ কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আর্জি জানান। চিঠিটি নেত্র নিউজের নামে লেখা কোনো সাধারণ চিঠি হলে কারো কোনো কিছু বলা বা ভ্রæক্ষেপ করার কথা ছিল না। কিন্তু চিঠিটি গিয়েছে ৬ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের নামে- যাদের মেধা, রাজনৈতিক বিচারবিশ্লেষণ নিশ্চয়ই নেত্র নিউজের মানের হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চিঠিটি পড়ে মনে হয়, নেত্র নিউজ এটির যে ড্রাফট করেছে, লবিস্ট ফার্ম সেটি কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষরসহ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে প্রেরণ করেছে। চিঠিটি পড়ে বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ মনে করবে কংগ্রেসম্যানরা ঘটনার ইতিবৃত্তের কিছুই ঠিকমতো জানেন না। কারণ এই চিঠিতে এমন সব বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যেগুলো ২০০৯ সালের পরের ঘটনা নয় বরং ২০০১-০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের কিংবা তারও আগের। এখন কংগ্রেসম্যানরা বলতে পারেন তারা কাদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন? অন্য আমলের অপকর্মকে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেখিয়ে কংগ্রেসম্যানরা নিজেদের মর্যাদাই তো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। চিঠির শুরু থেকে শেষ অবধি পড়লে বোঝা যাবে এটি একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন, শেখ হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে বিদ্বেষিত গোষ্ঠীর লেখা কোনো অভিযোগপত্র। চিঠির শুরুই করা হয়েছে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত তার শাসনামলের একটি ফিরিস্তি দিয়ে। সবাই জানে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয় লাভ করার পর। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এই সরকারকে চিঠিতে দেখানো হয়েছে যে তারা ক্ষমতায় এসেই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যাযজ্ঞ, বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা, ক্ষুদ্র জাতি ও ধর্মগোষ্ঠীর মানুষকে অত্যাচার নিপীড়ন করা, ধর্মান্তরিত করা, তাদের মন্দির-গির্জা পুড়িয়ে ফেলা, বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে আক্রমণ করা, অবাধ গণতন্ত্রের সুযোগ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া শক্তিরূপে। চিঠিতে এমন সব বানোয়াট তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০০৯ সালের পরে বাংলাদেশে ঘটে থাকলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস কিছুই জানত না, ওয়াশিংটনও জানত না এমনটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু কংগ্রেসম্যানরা কি এসব পড়েছেন, যাচাই-বাছাই করেছেন নাকি বেদবাক্য মনে করেই নেত্র নিউজের ড্রাফটে স্বাক্ষর করেছেন। প্রশ্ন জাগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বিজয়ী শেখ হাসিনা সরকার যদি এতটাই খারাপ হয়ে থাকে তাহলে সেটি কীভাবে এতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারল? যারা শেখ হাসিনা সরকারকে ওইভাবে চিত্রায়িত করেছে সেই নেত্র নিউজের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের রাজনৈতিক অতীত কী, আদর্শ কী, তাদের অর্থদাতা কারা- সেটি বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন মানুষ জানে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জানা খুবই জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিংবা তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টরা শেখ হাসিনার শাসনামলের প্রশংসা কীভাবে করলেন? নিশ্চয়ই তারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে খোঁজখবর ঠিকমতো রেখেই করেছেন। কিন্তু নেত্র নিউজ থেকে প্রদত্ত মার্কিন লবিস্ট হয়ে কংগ্রেসম্যানদের কাছে যাওয়া চিঠির বক্তব্য একেবারেই উল্টো কথা বলে। সেরকম অবস্থা বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে বিরাজ করছে, এটি কেবল সেসব শক্তি রাতদিন অপপ্রচার করছে যারা সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী, ধর্মান্ধ, ভারতবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে বাংলাদেশে অতিপরিচিত। নেত্র নিউজের সঞ্চালকগণ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে যে সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী নিধন, জঙ্গিবাদী হত্যাকাণ্ড একের পর এক ঘটে চলেছিল তাদেরই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক, ধারক ও বাহক কিংবা একই গোত্রের অধিকারী। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতি ও সম্প্রদায়গোষ্ঠীকে হত্যা, ধর্ষণ, মন্দির লুটপাট, জ্বালিয়ে দেয়া এবং প্রতিবেশী দেশে বিতাড়িত করার ঘটনা তখনই ঘটেছিল ভয়ানকভাবে। ১৯৭৫-এর পর থেকে এই ধারা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০১ সাল পর্যন্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি উদারবাদী গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল। তখনই প্রতিক্রিয়াশীল, জঙ্গিবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা, শেখ হাসিনাকে হত্যা, বাংলা নববর্ষের আয়োজন পণ্ড করে দেয়ার চেষ্টা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলা করা ইত্যাদি ঘটিয়েছিল। ২০০৯ সালের পর ওই অপশক্তিকে শেখ হাসিনার সরকার কঠোরভাবে রোধ করার চেষ্টা করলে তারাই ৫ মে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের একটা গোপন ষড়যন্ত্র করেছিল। ২০১৩-১৪ এর নির্বাচন পণ্ড করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। সেই অপশক্তির ব্যক্তিগোষ্ঠীরাই বিদেশে বসে নানা অপপ্রচার, উন্মাদনা, মিথ্যাচার এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারাই এখন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রবক্তা সেজেছে। আগামী নির্বাচনকে সম্মুখে রেখে তারা এখন বিপুল অর্থ খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ এবং মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বিভ্রান্ত করার জন্য চিঠিতে শেখ হাসিনার সরকারকে চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও মার্কিন নিরাপত্তার স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষয়টিই প্রতারণামূলক। বাংলাদেশ কোনো বিশেষ রাষ্ট্র বা দেশের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, বরং সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতেই শেখ হাসিনার সরকার অটল রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় বিরাজ করছে। তারপরও নেত্র নিউজ কংগ্রেসম্যানদের প্রতারিত করতে এমন মিথ্যা তথ্য যুক্ত করেছে। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজ নিজ ভূমিকা পালন করছে। মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App