×

সাহিত্য

জাতিকে বাঁচাতে জাতীয় জাগরণ তৈরি করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=cnsMzdlV0mU

বাঙালির ধমনীর রক্ত যদি না থাকে তাহলে শরীরে চেহারায় মেকআপ করে কি লাভ? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেছেন, জাতিকে বাঁচাতে হলে জাতীয় জাগরণ তৈরি করতে হবে। আর এই জাগরণ তৈরিতে আমাদের শেষ ভরসাস্থল আওয়ামী লীগের কাছেই চাইতে হবে।

জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে কমপক্ষে ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বুধবার (৭ জুন) দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহর সঞ্চালনায় জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ড. মুহাম্মদ সামাদ, শিক্ষাবিদ রতন সিদ্দিকী, শিল্পী বুলবুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী, শিল্পী নারায়ণ চন্দ্র শীল, অভিনয় শিল্পী সংঘের রওনক হাসান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের রেজিনা ওয়ালী লিনা, শিল্পী ফকির সিরাজসহ জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশানের নেতৃবৃন্দ।

শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা সংস্কৃতিহীন জাতি-রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি বরাদ্দ অবিশ্বাস্যহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেটা হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই। তাই সংস্কৃতি কর্মীদের সামনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের প্রধান শক্তিই হচ্ছে তার সংস্কৃতি। তাই শিক্ষা সংস্কৃতিকে বড়ো ল্যান্ডস্কেপে দেখতে হবে, মাইক্রোলেভেলে দেখে কিংবা দশ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েও কোনো লাভ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে অন্ধকারের দিকে নামছে, তা একেবারে গতিহীন নামছে, এর কোনো গতি নেই। যে জাতি তার সংস্কৃতিকেই বোঝে না তাকে দিয়ে কী হবে? এই জায়গায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কাজ করতে হবে। বাচাতে হবে বাংলাদেশকে।

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কৃতিবিযুক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর সংস্কৃতি পেছনের দিকে হাঁটছে। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সংস্কৃতি কর্মীদের জাগরণের নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।

সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেলে জাতির আত্মাই মরে যাবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করেছি, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনের ফসল হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যে আজ ক্ষমতায় রয়েছে আমাদেরই আন্দোলনের ফসল। তাদের কাছে আমাদের এই দাবী জানানো সঙ্গত ও অধিকার রয়েছে।

বরাদ্দের জন্য অনেক কিছু আটকে থাকে না উল্লেখ করে শরমিন্দ নীলোর্মী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের নামে অনেকগুলো গাছ কেটে ফালা ফালা করে ফেলেছে, সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে প্রতিবাদে দেখিনা। গাছ কাটা বা কোনো অন্যায় হলে কিংবা আজকের বিদ্যুৎ সমস্যায়ও সংস্কৃতিকে দাড়াতে হবে।

২০২৩ এর বাজেট এশিয়ান ড্রামা উল্লেখ করে রতন সিদ্দীকী বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু মননের সমৃদ্ধির কথা ভাবেনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মননের সমৃদ্ধি ঘটাতে হবে। কারণ আমরা এখন অন্ধকারের বাংলাদেশের আছি।

বুলবুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সংস্কৃতি বোঝে না। যে দেশে রাজনৈতিক নেতারা সংস্কৃতি বোঝে না সে দেশের পরিস্থিতি এমনই হবে। অথচ বঙ্গবন্ধু জেলে যাওয়ার সময়ও রবীন্দ্রনাথের বই নিয়ে যেতেন।

সংস্কৃতি খাতে বাজেট বরাদ্দের জন্য আমাদের দাবী এপিক দাবীতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে আহকাম উল্লাহ বলেন, ক্রীড়ায় যে বাজেট তা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোডের মাধ্যমে হয়, ফুটবলের বাজেট বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে হয়, হকির বাজেট হকির মাধ্যমে হয়, শ্যূটিং ফেডারেশনের বাজেট শ্যূটিং ফেডারেশনের মাধ্যমে হয়, কেবল সংস্কৃতির বাজেট বরাদ্দে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কোনো ভূমিকা নাই। যেখানে ১৬টি ফেডারেটিভ বডি সম্পৃক্ত।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ মানেই হচ্ছে গান বাজনার জন্য বরাদ্দ। সংস্কৃতি হচ্ছে আন্দোলন। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে ও সবার ওপরে মানুষ সত্য এই দর্শনে বাস্তবায়ন হবে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা পাব। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে সরে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App