১৫-১৬ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ০৮:০০ পিএম
জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিদ্যুৎ , জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ খাতে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা সম্পূরক বাজেট পাশের ব্যাপক বিরোধীতা করে আনা ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফেরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বর্তমান বিদ্যুতের নাজুক ব্যবস্থাপনায় প্রতিমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন অধিবেশনে।
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশিথে প্রদীপ ভাতি’। তিনি বলেন, অসময়ে আমরা ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ফেলেছি, অথচ আমাদের লাগে ১৪ হাজার মেগাওয়াট, বাকিটা নষ্ট হয়েছে। আজকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত চেয়েছেন। আর আপনার বাকি আছে বিভিন্ন কলকারখানার কাছে ২ হাজার কোটি টাকা। আপনাকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি অনেকগুলো বিল পরিশোধ করতে হবে যা ৭১ বিলিয়ন ডলার, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে তা ফখরুল ইমাম জানতে চান।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শিল্পায়ন কমে যাবে, কৃষি উৎপাদনে ধ্বস নামবে। এক সময় বিদ্যুৎ ছিল, দেশের প্রত্যেকটা গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এই গরমে হঠাৎ করে কেন বিদ্যুৎ চলে গেল। এজন্য আগে থেকেই কয়লা , ডিজেল আমদানী করা উচিত ছিল। আমি মনে করি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নিজেদের মধ্যে সমম্বয় নেই, যার ফলে আজ এই অব্যবস্থা। এই প্রচণ্ড গরমে আমরা মনে করি অতি দ্রুত আমাদের কয়লা আমদানী করতে হতে হবে, যাতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত চালু করা যায়। তিনি বলেন, সচিবালয়ে দেখা গেছে সচিবদের বাথরুমের মধ্যেও এসি আছে, সেখানে সেন্ট্রাল এসি চালিয়ে রেখেছে, তাদের এসি আবার হাই ভোল্টেজে, তা একবার চললে আর বন্ধ হয় না। অথচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। শহরের কিছু ধনিক শ্রেণির মানুষের জন্য কেন গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না তা হতে দেয়া যায় না। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমানের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, বিদ্যুৎ তো মানুষ পাচ্ছেই না তার মধ্যে তিনি কি করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তোলেন?
রুস্তম আলী ফরাজী প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি কেন বলেন না কোন সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, কোন সময় থাকবে। কেউ কিছুই জানে না। একেবারে নো ম্যানস ল্যাণ্ডের মতো অবস্থা তো চলে না। কেন বিদ্যুৎ নেই, কখন থাকবে না তা জনগণকে জানান। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে, তারা কিন্তু আপনাদের সুনাম নষ্ট করতে পারে, এটা থেকে সাবধান।
জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ডলারের সঙ্কটে এলসি খোলা যাচ্ছে না যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তেল আনা যাচ্ছে না। অথচ গত সোমবার এই সংসদে সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশে ভোলায় নাকি গ্যাসকুপের ছড়াছড়ি, একেবারে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা, সারা পৃথিবীর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। তাহলে সরকার কেন গ্যাস অনুসন্ধান চালাচ্ছে না, তাহলে তো এ সঙ্কট অনেকখানি কেটে যেত। এত সঙ্কট দেখা দিত না। এখন যেভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে তার ওপর আগামী ১০ বছরে গ্যাস একদম ফুরিয়ে যাবে, নতুন করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে গ্যাসকুপ কেন অনুসন্ধান করছে না, আবার বিদ্যুতের ভুয়া বিল কেন আসে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
চলতি মাসেই বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে: নসরুল হামিদ
প্রত্যুত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেশি দিন আগের কথা না, মাত্র ১৪ বছর আগেও প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। কোভিড আমাদের স্মরণ শক্তির ক্ষতি করেছে। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই আগে ১৭-১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আমরা সঞ্চালন লাইন করেছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। যখন আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলি তখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচের বিষয় ছিল। তার ওপর সঞ্চালন লাইন , ডিস্টিবিউশন লাইন ও জ্বালানি খরচও কিন্তু দিতে হয়। আমাদের প্রস্তুতি আছে ২০-২২ হাজার মেগাওয়াটের । যেকোন মুহূর্তে উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু কোভিড পরবর্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মতো চ্যালেঞ্জ এসেছে, সারা বিশ্বে জ্বালানিসহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। পাওয়া যাচ্ছে না গ্যাস ও তেলের দামও অস্বাভাবিক। আরো বড় চ্যালেঞ্জ আছে- বিশ্বের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তার ওপর পাবো কি পাবো না তাও অনিশ্চিত। তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে বারো হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছি, রাতের বেলায় ১৫ হাজার। আমাদের ঘাটতি আছে রয়েছে ২ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, প্রতি বছর জ্বালানি বাবদ ৮ হাজার কোটি টাকা, গ্যাসে ১২ হাজার কোটি, আর চলতি বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি দিতে হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈশ্বিক অবস্থার কারণে আমরা সময়মতো কয়লা আনতে পারেনি। তবে ১৫-১৬ দিনের মধ্যে কয়লা এসে যাবে। আবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ৪০ লাখ অটোরিকশা মধ্য রাতে চার্জ দিতে ৩৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খেয়ে নিচ্ছে। আমরা তো বন্ধ না করে ইনক্রিজ করছি। আশা করছি এ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সমস্যা কেটে যাবে।