×

সম্পাদকীয়

সিন্ডিকেটের জালে পেঁয়াজ : বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:৪৬ এএম

সিন্ডিকেটের জালে পেঁয়াজ : বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে

পেঁয়াজের বাজার অস্থির। একদিনের ব্যবধানে ২৫ টাকা বেড়ে গত পরশু প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হয় ঢাকার বাজারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। আমদানির ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা কমে নামে ৭৫-৮০ টাকায়। পেঁয়াজের মূল্যের এই নাটকীয় ওঠানামা বাজারের সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়। সংশ্লিষ্টদের মতে- উৎপাদন ঘাটতি, হাতবদলের কারণে দাম বেড়ে যাওয়া, সিন্ডিকেট ও আমদানি বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পেঁয়াজ বাজার। গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন গতবারের তুলনায় ২ লাখ টনের মতো কম হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি হলে বা আমদানি বন্ধ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। টিসিবির হিসাবে, গত পরশু ঢাকার বাজারে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এমনকি একদিন আগেও দাম ছিল ৭৫ টাকা। গতকাল আমদানির ঘোষণাতেই আবার দাম কমে কেজিতে ২০-২৫ টাকা। গত মাসের এ সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকায়। টিসিবির হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ৭৮ শতাংশ বেশি। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম হলেও এ সময়ে পেঁয়াজের তেমন ঘাটতি নেই। তাহলে একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেন ২৫ টাকা বাড়বে আবার আমদানির কথা শুনেই ২০-২৫ টাকা কেজিপ্রতি কমবে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তাদের আস্ফালন কমছে না। কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সিন্ডিকেটের কারণে তার সুফল মিলছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা উচিত এবং এই অভিযান সারা বছর অব্যাহত রাখা দরকার। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। সামনে কুরবানি ঈদ আসছে। পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংবার্ষিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। ক্রেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App