×

সারাদেশ

মানিকগঞ্জের কৃষকরা এবছর বোরোধানে পাবে অতিরিক্ত প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম

মানিকগঞ্জের কৃষকরা এবছর বোরোধানে পাবে অতিরিক্ত প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা

ছবি: ভোরের কাগজ

মানিকগঞ্জে চলতি মৌসুমে বোরোধানের নজিরবিহীন ফলন হয়েছে। মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর, সাটুরিয়া ও সিংগাইরে বোরোধানের ফলন সর্বকালের ইতিহাস ভঙ্গ করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে কৃষকদের দাবি।

মানিকগঞ্জ কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর বোরোধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুসরণ করে কৃষকরা বোরোধানের আবাদ করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার কৃষকরা আশাতীত ফলন পেয়েছেন।

শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর, কলাগাড়ীয়া বনগ্রাম ও সাহিলী গ্রামের কৃষক আরিফ, মোতালেব, আব্দুল কুদ্দুস ও চানুসহ শতাধিক কৃষক জানান, এবছর বোরোধানের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। প্রতি বিঘায় তারা গড়ে ৩০-৩২ মন ধান পাবেন বলে আশা করছেন। সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম এলাকার কৃষক মো. মতিন এবং দবির মোল্লা জানান, তাঁরা ৭ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরোধান আবাদ করেছেন। জমিতে চাষ, কীটনাশক, সেচ, আগাছা দমন, ধান কাটা ও মাড়াইসহ প্রতিমন ধান উৎপাদনে তাদের গড়ে পাঁচশো টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিমন নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শো টাকা দরে। খরচ বাদে আমরা এখন মন প্রতি যে পরিমাণ টাকা পাচ্ছি তাতে আমরা বেশ খুশি। দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ও চকমিরপুর এবং সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল ও চারিগ্রাম এলাকার কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে ৮৯ জাতের বোরোধান আবাদ করায় আমরা সন্তোষজনক ফলন পেয়েছি। আগামীতেও আমরা কৃষি অফিসের নির্দেশানুযায়ী চাষাবাদ করে সংসারে স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে এবং দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বিশেষ অবদান রাখতে চাই।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাঘিয়া, বালিরটেক, শানবান্দা, চৌল্লা ও বাঙ্গাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, আমাদের এলাকায় বোরোধানের আবাদ আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের যথাযথ তদারকিতে আমরা এবছর আশানুরূপ ফলন পাব। তবে, কৃষকদের অভিযোগ হারভেস্টার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২৫শো থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এলাকার কতিপয় দালাল ও সিন্ডিকেট প্রতিহত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেন তাহলে বাঁচবে কৃষক আর সফল হবে সরকারের মহতী উদ্যোগ। ধান ক্রয় এবং পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি থাকলেও তাঁদের ভূমিকা যেন খাতাকলমেই সীমাবদ্ধ। এই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি কামনা করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে শিবালয়ের একজন হারভেস্টার মালিক জানান, ধান কাটার চাহিদার ভিত্তিতে আমরা দর নির্ধারণ করে থাকি। সরকার থেকে এ বিষয়ে আমাদের কোন রেট নির্ধারণ করে দেয়নি। তাঁরা আরও বলেন, আমরা ইচ্ছে করলেই যে কোন এলাকায় গিয়ে ধান কাটতে পারিনা। এলাকার রাজনৈতিক একটি বিষয় আছে। তাঁদের ম্যানেজ না করে আমরা কাজ করতে পারিনা। সেক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে খরচ বাড়িয়ে না নিয়ে কোন উপায় নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে মোট ৪৮ হাজার ৭শো ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ হয়েছে। এবছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান পূর্বের তুলনায় বেশি আবাদের কারণে আশাতীত ফলন হয়েছে। বিশেষ করে ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ১০০, নতুন ভ্যরাইটি বিনা ২৫ জাতের চারা আমরা ব্যাপকভাবে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছি। সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে, বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মসূচীর মাধ্যমে, গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিনা ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউট থেকে প্রচুর পরিমাণ উন্নতজাতের বীজ এনে আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। গতবছর মানিকগঞ্জে যে লিডিং ভ্যরাইটি ছিল ২৮-২৯ এবং যার কাভারেজ ছিল ৬৯ শতাংশ। চলতি বছর তার আনুপাতিক হার নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। বিপরীত দিকে ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ১০০ এবং বিনা ২৫ লিডিং পয়েন্টে চলে এসেছে। যার কাভারেজ এখন ৭৭ শতাংশ। এর ফলে গত বছরের চেয়ে ১ লক্ষ মে.টন ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App