×

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ০৩:৩৭ পিএম

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

৩ চিকিৎসকের সনদ বাতিলের দাবি

রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জাকির হোসেন নামের এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অনৈতিক রিং বানিজ্য ও অপচিকিৎসার দায়ে দায়িত্বরত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, ডা. শেখর কুমার মন্ডল ও ডা. রাশেদুল হাসান কনকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির এবং তাদের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নাসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ এনে এই দাবি করেন জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরণের ভুক্তভোগীর স্ত্রী নুরুন নাহার। এসময় মৃত্যর দুই মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।

স্বজনদের দাবি, রোগীর স্বজনদের সাথে কোনো পরামর্শ না করেই গত মো. জাকির হোসেনের (৫১) হার্টে রিং বসানো হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় গত ১৬ মার্চ রোগীর মৃত্যু হয়।

নুরুন নাহার রোগীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন চিকিৎসক ও কার্ডিওলজিস্টদের থেকে পাওয়া তথ্য ও গ্রীন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসায় অবহেলায় স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির হোসেন। ভর্তির পরেই ইসিজি করা হয়। সকালবেলার ইসিজি রিপোর্টেই তার স্বামীর হার্ট এ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক সেটি ধরতে পারেননি। রোগীকে ৩টা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন তিনি। যে সব টেস্ট করানো প্রয়োজন ছিলো সেই মূহুর্তে তা উনি করাননি, করাতেও বলেননি। এমন কি একজন কার্ডিওলজিস্টও দেখানোর পরামর্শ দেননি। একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাষ্ট্রোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে উনি রোগীর ডায়াবেটিক ও বুকের ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞক দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে একই হাসপাতালের ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে রোগী ঘন্টা দেড়েক এর বেশী বাঁচবে না জানান। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন।

পুনরায় গ্রীন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদেরকে এক প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ না করে বা আমাদের মতামত না নিয়ে রোগীকে রিং পরানো হয়।

ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার অভিযোগ করে নুরুন নাহার বলেন, রোগীকে রিং পরানোর পরে হাসপাতালে পোস্ট অপেরেটিভ ম্যানেজমেন্ট করতে চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ডায়াবেটিস রুগি জানার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সারারাত ইনসুলিন না দিয়ে ফেলে রাখে। রাতে রোগীর সুগার কন্ট্রোল না করাতে রোগীর কিটোন বডি পজিটিভ চলে আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সময়মত ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করতে পারেনি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে গত ১৬ মার্চ রোগী মারা যান। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় জিডি করেছে পরিবারটি।

এসময়ই ঘটনার দুই মাস পর গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, রোগীর মৃত্যুর পর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করি। তারা আমাদের মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সাড়ে ছয় লাখের অধিক হাসপাতালের বিল ছাড়াই ১৬ মার্চ লাশ হস্তান্তর করেন। একই সাথে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক আদেশ ডা. শেখর ও কনককে বহিষ্কার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানায়। তবে তাঁরা তাঁদের কথা না রাখায় আমরা আইনের দারস্থ হয়েছি। আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসির কাছে গ্রীন লাইফ হাসপাতাল ও দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে এতদিনেও তাদের তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে তবে তারাও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ অবস্থায় আদালতে গ্রীন লাইফ হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে মৃত জাকির হোসেনের পরিবার।

এবিষয়ে অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম বলেন, রোগী জাকির হোসেনের হার্ট এ্যাটাক নিশ্চিত হওয়ার পর আমার সহকর্মী ডা. শেখর কুমার মন্ডলের অনুরোধে দ্রুততম সময় হাসপাতালে মধ্যে পৌছে রুগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করার পর ইসিজি এবং ব্লাড সুগার পর্যালোচনা করে প্রাইমারি পিসিআই এর পক্ষে মতামত প্রদান করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App