×

শিক্ষা

বায়োওয়েপন গবেষণায় জাতিসংঘের ইউনোডার ফেলো হলেন শাবিপ্রবির ইউশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ০১:১২ এএম

বায়োওয়েপন গবেষণায় জাতিসংঘের ইউনোডার ফেলো হলেন শাবিপ্রবির ইউশা

বায়োওয়েপন গবেষণায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টায় সহায়তাকারী অঙ্গ সংগঠন ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিসেস ফর ডিজআর্মামেন্ট অ্যাফেয়ার্সের (ইউনোডা) ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী ইউশা আরাফ।

ইউশা আরাফ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের (ইউনোডা) ওয়েবসাইটে ২০ তরুণ ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও গবেষকের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউনোডার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বায়োওয়েপন ও নিউক্লিয়ার ওয়েপন থেকে বিশ্বকে কিভাবে মুক্ত রেখে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে কাজ করে ইউনোডা। প্রতি পাঁচ বছর পর পর বায়োওয়েপন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন আয়োজন করে ইউনোডা। এখানে ইউনোডার সদস্যভুক্ত ১৮৪ দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকে। জৈবিক অস্ত্র কনভেনশনের (বিউসি) কাঠামোর মধ্যে বহুপাক্ষিক আলোচনায় তরুণ ও যুবকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে জৈবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আদর্শ বজায় রাখতে এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এই কনভেনশনে জৈবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুব দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণে অনুর্ধ ৪০ বছরের বিজ্ঞানীদের জন্য তিনমাস মেয়াদী ‘ইয়ুথ ফর বায়োসিকিউরিটি ফেলোশিপ’ প্রোগ্রাম চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ থেকে আটশতাধিক বিজ্ঞানী ও গবেষক থেকে ২০ জন ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইউশা আরাফ ইউনোডার কোনো প্রোগামের ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হয়েছেন।

অনুভূতি ব্যক্ত করে ফেলোশিপ প্রাপ্ত ইউশা আরাফ বলেন, বায়োওয়েপন নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনোডা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০জন ফেলো নির্বাচিত করেছেন। এতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাছাড়া, ২০ জন ফেলোর মধ্যে সর্বকনিষ্ট হিসেবে এই ফেলোশিপ পাপ্ত হওয়ার কথাও জানাননি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তরুণ এ গবেষক বলেন, বায়োটেকনোলজি অগ্রগতিতে বিশ্ব এখন অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কেননা আগামীতে নিউক্লিয়ার ওয়েপনের থেকে বায়োওয়েপন বেশি ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করছে। এ নিয়ে যেহেতু কাজ করার সুযোগ মিলছে সেহেতু এদিকেই কাজ করতে চাই। বায়োওয়েপন নিয়ে সায়েন্টিফিক ডিপ্লোম্যাট হিসেবে বিশ্বের সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে চান বলে জানান তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হিসেবে ডেঙ্গু মহামারি নিয়ে গবেষণা করছেন বলে জানান ইউশা।

ইউশার স্নাতকের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, যদিও ইউশার একাডেমিক রেজাল্ট ভালো না। সে আমার তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে। তারা কমিউনিটির সাথে ভালো যোগাযোগ আছে। সে বায়োটেকনোলজি নিয়ে গবেষণায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। তার এ সাফল্য আমাদের, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইতোমধ্যে যে তরুণদেরকে নিয়ে কাজ করতে ‘কমিউনিটি ফর বায়োটেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছে। আশা রাখি আগামীতে তার এই সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে।

উল্লেখ্য, ইউশা আরাফের ৬০-এর অধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। তার সাইটেশন বর্তমানে ১৩০০ অতিক্রম করেছে। তিনি ২০২১ ও ২০২২ এই দুই বছরেই ইউশা আরাফ স্কোপাস ডেটাবেজ অনুযায়ী সর্বাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশনায় শাবিপ্রবির শ্রেষ্ঠ গবেষক নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগারে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। করোনা ভাইরাসের অমিক্রন নিয়ে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ বিশ্ব বিখ্যাত জার্নাল ‘জার্নাল অব মেডিক্যাল ভাইরোলজি’তে বিগত দুই বছরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এছাড়া, এই তরুণ গবেষক ২০২২ সালে থেকে জীববিজ্ঞানের বৈশ্বিক সর্ববৃহৎ প্রতিযোগিতা আইজেম কমপিটিশন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০২২ সালে জাতিসংঘের ইউরোপের সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইজেমের প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এছাড়া, চলতি বছরে কানাডা সরকারের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর বায়োসেফটি অ্যাসোসিয়েশন (আইএফবিএ) ১ বছরের গ্লোবাল মেন্টেরশিপ প্রোগামের জন্য সমগ্র বিশ্ব থেকে ২০ জন তরুণ গবেষক ও বিজ্ঞানীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ইউশা আরাফ এখানেও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাচিত হন।

জানা যায়, ইউশা আরাফ বায়োটেকনোলজির অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘কমিউনিটি অব বায়োটেকনোলজি’ শীর্ষক এর প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইতোমধ্যে তার এই প্রতিষ্ঠান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী, বায়োটেক উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের জীবপ্রযুক্তির শিক্ষার্থীদের জন্য নানাবিধ সুযোগও তৈরি করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App