×

মুক্তচিন্তা

পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩, ০৪:০৪ এএম

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার যেমন শেষ নেই, তেমনিভাবে প্রচার-প্রচারণা ও গবেষণার অন্ত নেই। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব উপাদানকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পলিথিন চরম হুমকি। এ কারণে প্রায় দুই দশক আগে আমাদের দেশের সরকার ১ জানুয়ারি ২০০২ ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারাদেশে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তখন কিছুদিন পাটের (চটের) ও কাগজের ব্যাগের ব্যবহার সাময়িক সময়ের জন্য লক্ষ্য করা গেলেও প্রচার-প্রচারণা এবং মানুষের অসচেতনতার অভাবে আবার পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, খালি হাতে বাজারে গিয়ে ৮-১০টি রঙিন পলিথিন ব্যাগ ছাড়া ঘরে ফেরা অসম্ভব এবং অকল্পনীয়। পলিথিন দামে সস্তা, ব্যবহারে খুব সুবিধাজনক কিন্তু পলিথিন এমন একটি উপাদানে তৈরি, যা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য মোটেই উপযোগী নয়। তাই নিজেদের স্বার্থে এবং পরিবেশের সুরক্ষায় ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলো অতিপ্রয়োজনীয় পানি এবং মাটি মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। বিভিন্নভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের সৃষ্টি করছে। এর বিকল্প হিসেবে পাটের সোনালি ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পলিথিনের মধ্য থেকে বিষফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না, বরং মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে পড়ে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে তাতে বাষুদূষণ ঘটে। পরিবেশ দূষণের দায়ে কলকারখানাকে জরিমানা কিংবা নদনদী ও জলাশয় দূষণ বা দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো হলেও পলিথিনের ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ তেমন নেই বললেই চলে। এ কারণে সর্বত্র নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। যদিও এ অপরাধ বন্ধে সচেতনতারই বেশি দরকার, তবুও আইনের প্রয়োগও বাড়াতে হবে। না হলে এর উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ হবে না। এ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। বর্তমানে পলিথিনের কাঁচামাল দিয়ে এক ধরনের টিস্যু পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদনকারীরা বলছে, এটা ‘পরিবেশ বান্ধব’। কিন্তু বুয়েটের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, পলিথিনের মতই টিস্যু পলিথিন পরিবেশের জন্য ‘মারাত্মক ক্ষতিকর’। অথচ পলিথিনের বিকল্প হিসেবে নতুন উদ্ভাবিত পরিবেশ বান্ধব পাটের সোনালি ব্যাগ সহজেই ব্যবহার করা যায়। প্রায় ২৫ বছর আগে করা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ২০০২ সালে সংশোধনী এনে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়। সরকার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৬(ক) ধারাটি সংযোজন করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডও হতে পারে। শুধু প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেই পলিথিনের ব্যবহার রোধ করা সম্ভব। এজন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরকে অধিক সতর্ক হতে হবে এবং পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকরণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। মো. জিল্লুর রহমান : সতিশ সরকার রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App