×

মুক্তচিন্তা

বাজেট বাস্তবায়নই আসল চ্যালেঞ্জ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:৫৪ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার মেগা বাজেট ঘোষণা করেছেন। দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। জুনের প্রথম দিনে জাতীয় সংসদে পেশকৃত প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৫১ বছর আগে ঘোষিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ হাজার গুণ বড়। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বাজেট। একই সঙ্গে এটি সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেটও। ২০০৬-০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সর্বশেষ বাজেটের আয়তন ছিল ৭৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ১৭ বছরের ব্যবধানে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। বৈশ্বিক মন্দা পৃথিবীর প্রায় সব দেশকে গভীর সংকটে ফেলেছে। বাংলাদেশকেও পোহাতে হচ্ছে মন্দার ধকল। তারপরও জাতীয় নির্বাচনের ৬ মাস আগে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর যাতে করের বোঝা না চাপে সেদিকে যথাসম্ভব নজর দেয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চালু করা হয়েছে নতুন ধরনের পেনশন স্কিম। এতে ১০ বছর চাঁদা জমা দিলে আজীবন পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যা প্রশংসার দাবিদার। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট নিঃসন্দেহে বড় কিছু নয়। তবে বাজেটে ট্যাক্স ও ভ্যাটের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হওয়ায় বাদবাকি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি ঘাটতি থাকবে এবং এ অর্থ ব্যাংক ঋণ ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে পূরণ করা হবে। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে জনপ্রশাসন নামের শ্বেতহস্তির পেছনে ব্যয় হবে ২২ শতাংশ অর্থ। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও সরকারি-কর্মচারীদের আয় বৃদ্ধি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বাজেটে সাধারণ মানুষের কল্যাণের খাত এডিপিতে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। দেশবাসী চায় এ অর্থের শতভাগ সঠিকভাবে ব্যয় হোক। এডিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। বাজেটে করযোগ্য আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। নির্বাচনী বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; ৩ শতাংশেরও কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে এবং হতদরিদ্রের সংখ্যা নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। মুদ্রাস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে, রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২০ শতাংশের ওপরে থাকবে, বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি- এই চারটি স্তম্ভের ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে কর বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া ৫০ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। কর বাবদ যে রাজস্ব আসবে তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ২০ হাজার কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর। ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেবে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা। নিট বৈদেশিক ঋণ নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করছেন, এবারের বাজেট বাস্তবভিত্তিক হলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এর মধ্যে রাজস্ব আদায় হবে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যবারের তুলনায় নতুন অর্থবছরে এনবিআরে লক্ষ্যমাত্রা বেশি দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মত, এনবিআর তাদের কর্মধারা পরিবর্তন না করলে গতানুগতিকভাবে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। সরকার এমন একটি সময় বাজেট দিয়েছে, যখন মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য বড় চিন্তার কারণ। গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ অবস্থায় সরকার কীভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। যারা টিন নম্বরধারী, তাদের ২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক কর দিতে হবে, আয় না থাকলেও। এটা বোধহয় এবারের বাজেটের একটি প্রশ্নবিদ্ধ দিক। যার করযোগ্য আয় নেই, তিনি কেন কর দেবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অযৌক্তিক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের সাড়ে ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। যাদের বরাদ্দ দেয়া হবে, তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সরকার দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App