×

সারাদেশ

বরিশাল সিটি নির্বাচন : নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০৯:১৮ এএম

বরিশাল সিটি নির্বাচন : নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে

বরিশালে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরির চেষ্টার পাশাপাশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন মেয়র প্রার্থীরা। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে কড়া আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তারা। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলছেন, এখনো নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর উঠানবৈঠকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মারামারি এবং এতে তিনজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় থানা কিংবা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দায়ের করেননি কোনো পক্ষ। অপরদিকে কারাগারে থাকা সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাদিকপন্থি রইজ আহম্মেদ মান্নার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, মানুষ ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো নিশ্চিত হয়নি। আওয়ামী লীগের যারা নেতাকর্মী রয়েছেন, তারা বিভিন্নভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগের বিশেষ নেতা এখানে এসে নৌকার লোগো লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। ওই নেতা সারা বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে একটা ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে না যায়। এ ধরনের অবস্থা যদি তারা চালিয়ে যেতে থাকে, জনগণ সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে।

সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা নিশ্চিত করেন। আর না হলে সারা বাংলাদেশে এই ভোটচুরির বিপক্ষে যে গণআন্দোলন শুরু হবে, সেই গণআন্দোলনে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হওয়ার দিকেই যাচ্ছে। যেমন আমাদের কিছু লোককে হয়রানি করার খবর এসেছে। এরপর টুপি-দাড়ি দেখে আমাদের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে- কোথায় বাড়ি, আসছেন কেন? অথচ, নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে কোথাও লেখা নেই এই শহরের বাইরের কেউ ভোট চাইতে পারবে না, আসতে পারবে না। আশপাশের কিছু লোক তো আসতেই পারে এবং সব প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার জন্যই তারা আসে। তিনি বলেন, নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে যা আছে, সেই দিকে প্রশাসনের লক্ষ্য করা উচিত। এর বাইরে অতি উৎসাহিত হয়ে অন্য কিছু না করাই ভালো। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি করব, বরিশালের নির্বাচনের দিকে গোটা দুনিয়া তাকিয়ে আছে। কাজেই নির্বাচন যদি কোনো অবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়, ক্লিন না হয় এবং যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের অবস্থা ভিন্ন দিকে মোড় নেবে বলে আমি মনে করি।

তবে এখন পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বলেন, বরিশাল নগরীর মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটাররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নৌকায় ভোট দেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপনের তিন কর্মীকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। রুপন বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পুলিশের কাছে গেলেও তারা সঠিকভাবে কিছু বলছে না। আবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আদালতে গিয়ে জানতে পারলাম মো. রমজান, মো. মোনায়েম খান, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম মন্টু নামে আমার তিন কর্মীকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সন্দেহজনক কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়েও দেয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল।

অপরদিকে শুক্রবার রাতে বরিশাল নগরীর ১০নং ওয়ার্ডে নৌকার উঠানবৈঠকে প্রতিদ্ব›দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে নারীসহ চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, উঠানবৈঠকের মঞ্চে ওঠা নিয়ে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বর্তমান কাউন্সিলর এ টি এম শহীদুল্লাহ কবিরের সমর্থক বিএনপিকর্মী সুমন ওরফে কৈতর সুমন সাবেক কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এছাড়া ওই উঠানবৈঠকে বেশ কয়েকটি চেয়ারও ভাঙচুর করেন তারা। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আহতদের শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো পক্ষ থেকে কোথাও অভিযোগ দেয়নি।

এদিকে নৌকার সমর্থকদের মারধর করার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কারাগারে থাকা ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. রইজ আহম্মেদ মান্নার নির্বাচনী প্রচরণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে নগরীর কাউনিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীর নিজ বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তার পরিবার। রইজ আহম্মেদ মান্না সদ্য বিলুপ্ত হওয়া বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মান্নার বড়ভাই একই ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মুন্না হাওলাদার বলেন, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বরিশাল সিটি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আমাদের পরিবার হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কতিপয় লোক প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের মা-বোন ও সমর্থকদের প্রচারণায় বাধা তৈরি করছে এবং কিছু লোক আমাদের কর্মীদের বাসায় গিয়ে প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে। অথচ আমার ভাইয়ের পক্ষে যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তবে কারা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু লেখেননি সংবাদ সম্মেলনের লিখিত অভিযোগে। অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগের এ বিষয়ে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় থানা পুলিশ কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App