×

জাতীয়

জাতীয় সংসদের ১০টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে ইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০৯:০০ এএম

জাতীয় সংসদের ১০টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ পরিবর্তনে সংসদ সদস্য (এমপি) এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ আসন থেকে এলাকা কেটে নেয়ায় যেমন নাখোশ হয়েছেন, তেমনি কারো এলাকা বাড়ায় তিনি কিছুটা খুশি হয়েছেন। এটি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় হওয়ায় আবার কয়েকজন এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংসদ থেকে পদত্যাগকারী বিএনপির সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ মনে করেন পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গত বৃহস্পতিবার সংদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল শনিবার ইসির ওয়েবসাইটে গেজেট আকারে এটি প্রকাশ করা হয়। ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো পিরোজপুর-১, পিরোজপুর-২, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-২, ফরিদপুর-২, ফরিদপুর-৪, গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ এবং নোয়াখালী-১ ও নোয়াখালী-২ আসন। এ ১০টিন আসন বাদে আরো ৮টি আসনের সীমানায় সামান্য কিছু পরিবর্তন হয়েছে, কোনোটার নামে, কোনোটার এলাকায়। এছাড়া সংসদের বাকি আসনগুলোতে সীমানার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে। সেজন্য ইসির তরফ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। এরপর এমপি, মন্ত্রী বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আবেদন জানিয়েছিলেন ইসিতে। আমরা গত মে মাসে আবেদনগুলোর শুনানি করি। শুনানি শেষে জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, উপজেলা, পৌরসভার অখণ্ডতা বজার রেখে যৌক্তিকভাবে কিছু পরিবর্তন এনেছি।

সীমানা পুনর্বিন্যাসে পিরোজপুর-২ আসন থেকে ইন্দুরকানী উপজেলাকে সরিয়ে নেয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি বলেন, আমার নিজ এলাকা ইন্দুরকানীকে আমি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন করেছি। সেখানে আমার সব ভোটার। এটা কেটে নিয়ে আমার আসনের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে নেছারাবাদ উপজেলাকে। যার ভোটার সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া নির্বাচন মাত্র ৪/৫ মাস আগে নতুন এলাকায় জনসংযোগ করা কঠিন হবে। এ নিয়ে পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কোনো কথা বলতে চাননি।

এদিকে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন থেকে কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এতে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফরিদপুর-২ আসনের এমপি শাহদাব আকবর। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এখানকার এমপি। অনেক উন্নয়ন করেছি, ভোটারদের সঙ্গে আমাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এটা কেটে নেয়ায় নগরকান্দার জনসংখ্যা অনেক কমে গেল। নগরকান্দায় আগে ভোটার ছিল ৩ লাখ থেকে সোয়া তিন লাখের মতো। সেখান থেকে প্রায় ২৮ হাজার ভোট কমে গেল। এতে আমার ক্ষতি হলো। এ বিষয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।

কুমিল্লা-১ আসন ছিল দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে। সেখান থেকে মেঘনাকে কেটে নিয়ে তিতাস উপজেলাজুড়ে দেয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. সুবিদ আলী ভূঁইয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি মেঘনার মানুষের সঙ্গে ওঁতপ্রোতভাবে যুক্ত। তারা একচেটিয়া আমার ভোটার। সীমানা পরিবর্তনের আগে আমার সঙ্গে কথা বলার দরকার ছিল। অন্যদিকে এ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন কুমিল্লা-২ আসনের এমপি সেলিমা আহমাদ। তিনি বলেন, আমি হোমনার ভোটার। নির্বাচন কমিশন হোমনা উপজেলার সঙ্গে মেঘনা উপজেলাকেজুড়ে দিয়ে সংসদীয় আসনকে পুনর্বিন্যাস করেছেন। আমি নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। আশা করি, আমার নির্বাচনী এলাকায় নতুন যোগ হওয়া মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আমার পাশেই থাকবেন। পুনর্বিন্যাসকৃত নতুন আসনকে স্বাগত জানিয়েছেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদও।

নোয়াখালী-১ থেকে বজরা ইউনিয়ন কেটে নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করায় খুশি হয়েছেন নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, আমার আসনের সঙ্গে জুড়ে দেয়া এলাকাটি আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকা। এবারে আমি সেখানে আরো উন্নয়ন করতে পারব। তাছাড়া আমার মাত্র ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ ছিল, এবারে ১৪টা হয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে মন্তব্য করেননি নোয়াখালি-১ আসনের এমপি এইচ এম ইব্রাহীম।

আবার গাজীপুর-২ আসনের সঙ্গে শুধু সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডটি যুক্ত হওয়ায় তেমন খুশি হতে পারেননি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি বলেন, আমার সংসদীয় এলাকার সঙ্গে ১৯ থেকে ৩৮নং ওয়ার্ড, আবার ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত রয়েছে। আমি চেয়েছিলাম ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড আমার এলাকায় যুক্ত হোক। কিন্তু মাঝখানে একটা ওয়ার্ড যুক্ত করায় আমার তেমন উপকার হলো না।

ছোটোখাটো কিছু পরিবর্তন এসেছে ৮টি সংসদীয় আসনের। কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ডাসার উপজেলা যুক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে যুক্ত করা হয়েছে। আর ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন ধর্মপাশা ও মধ্যনগর করায় মধ্যনগরের নাম যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা করায় নির্বাচনী সীমানায় এই অংশটুকু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এবং তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে। একই কারণে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসন গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা আসন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলায় করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে নতুন সীমানায়।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন চলতি সংসদ থেকে পদত্যাগকারী বিএনপির এমপি হারুন অর রশিদ। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নির্বাচনের ৫/৬ মাস আগে সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। নির্বাচন কমিশন মূলত সরকারের নির্দেশে এবং সরকারি দলের প্রার্থীদের সুবিধার দিকে নজর রেখে সীমানার পরিবর্তন এনেছেন। এটি একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App