×

জাতীয়

করমুক্ত আয়সীমা পুনর্বিবেচনার দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ০৮:২৪ এএম

করমুক্ত আয়সীমা পুনর্বিবেচনার দাবি

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে টেক্সটাইল, রপ্তানি খাত ও এসএমই খাতের জন্য তেমন কিছু দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে ম্যান মেড ফাইবার থেকে ভ্যাটসহ সব ধরনের কর প্রত্যাহার এবং রপ্তানির উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার জন্য আবারো সুপারিশ করছি। গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড রুমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান তিনি। এ সময় ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, এফবিসিসিআই সহসভাপতি আমিন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন, পরিচালক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জসিম উদ্দিন বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই করমুক্ত সীমা ৪ লাখ টাকা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হলো। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাক্সক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার অবাস্তব নয় বলেও জানান জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতি বছর বাড়ছে। তবে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। জসিম উদ্দিন আরো বলেন, এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে অত্যন্ত চাপের মুখে। এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ডলার সংকট ও বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ সবকিছুর গতি নি¤œমুখী। অথচ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী।

বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরামর্শ দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদনের পরিমাণ আরো বাড়ানো। এর মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যকর করে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করা জরুরি। এ উদ্দেশ্যে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি ও সফটওয়্যার খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানান জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগ আয়করমুক্ত এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূর্ণ পরোক্ষ করমুক্ত করা অত্যাবশ্যক। আর যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে। এ জন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সুসমন্বয় রাখতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গøাস, সুইচ-সকেট, কিচেনওয়্যারসহ ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে নির্মাণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জমির রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর আগের অবস্থায় রাখার জন্য প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, বাজেট বক্তব্যের ১৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদে পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটন মহাপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল কর্তৃক মূলধনী যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা সংক্রান্ত এসআরও বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পর্যটন শিল্পের বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। তাই এ রেয়াতি সুবিধা পর্যটন শিল্পের বিকাশে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি। জসিম উদ্দিন আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২৪৮, ২৪৯ এবং ২৫০নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কয়েকটি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হয়েছে- যা মূসক আইনের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পণ্য এবং সেবা খাতে মূল্য সংযোজনভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হলে খাত নির্বিশেষে সব পণ্য এবং সেবা খাত বিভিন্ন এস আর ও ভিত্তিক অসম করহার এবং জটিলতা থেকে রেহাই পাবে এবং কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App