জামায়াতের মিছিল বিষয়ে হারুন
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি জামায়াত বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কর্মসূচি ঘিরে তারা বিভিন্ন অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। আমাদের কমিশনার স্যারের কাছে (ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক) তারা (জামায়াত) যে আবেদন করেছিল জানমালের কথা চিন্তা করে তিনি নিষেধ করেছেন। এখন জামায়ত যদি পুলিশের কথা অমান্য করে, পুলিশের কথা না শুনে জোর করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে জানমালের ক্ষতি করে বিক্ষোভ করতে চাই সেক্ষেত্রে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়ায় যা করার তাই করা হবে। প্রয়োজনে কঠোর অ্যাকশন নেয়া হবে।
রবিবার (৬ জুন) ক্যান্টনমেন্ট থানায় (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট-ভাটারা) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তাহলে কী তারা অনুমতি পাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, আমি তো বলেছি আগামীকাল সোমবার অফিস-আদালত খোলা। মানুষ অফিস আদালতে যাবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাবে। এখন এদিক বিবেচনা করে আমাদের কমিশনার মহোদয় কাউকে অনুমতি দেননি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, যানমালের ক্ষতি হতে পারে এসব বিবেচনা করে জামায়াত-শিবির চক্রের যারা মিছিল করতে চায় তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা আছে, তারা যেমন কর্মসূচি না করেন। তাই নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও তারা যদি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কথা অমান্য করে জোর করে যানমালের ক্ষতি করে গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে চাই সেক্ষেত্রে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় এই উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে, অবৈধ সমাবেশের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিবো।
জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা প্রকাশ্যে সক্রিয় হচ্ছে এটা কিসের আলামত এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চায় তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
বিভিন্ন জায়গা থেকে জামায়াতকে ফান্ডিং করা হচ্ছে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এটা নিয়ে তদন্ত চলছে।’
জামায়াতের যারা পাঁচ লাখ করে ফান্ডিং করতে এই ধরনের সদস্যদের তালিকা করা হচ্ছে। এমন ধরনের তথ্য পুলিশ পাচ্ছে। তাদের কীভাবে আটকাবেন জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, এটা আমরা দেখতেছি। যাদের নিবন্ধন নেই, তাদের কারা ফান্ডিং করছে। তাদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে মিছিল-সমাবেশ করার অনুমোদন দেওয়া হয় না। তারা কাদের ছত্রছায়ায় কাদের ফান্ডিংয়ে সাহস নিয়ে সমাবেশ করতে চাচ্ছে; এটা আমরা তদন্ত করছি। এই অবৈধ সমাবেশের বিরুদ্ধে আমরা যা আইনগত ব্যবস্থা করার তাই করব।
কোনো রাজনৈতিক দল তাদেরকে ইন্ধন দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটা হতে পারে। কাদের ছত্রছায়ায় তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ সময় চিকিৎসার নামে তিনি বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এমন গুজবের বিষয়েও কথা বলেন। হারুন অর রশিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে একটি গ্রুপ দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে, আমি চিকিৎসার নামে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছি। এই অশুভ চক্র যে কাজটি করছে, এটি সম্পূর্ণ গুজব। নিজস্ব মনগড়া তথ্য দিয়ে ফেসবুকে ভিউ বাড়াতেই এমনটা করা হচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্যে টাকা কামানো ও পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কুচক্রী মহলের এ ধরনের অপপ্রচার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মনোবল ভাঙবে না।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা চিকিৎসা বা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজে দেশের বাইরে যেতেই পারেন। সেক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছুটি নিতে হয়। যারা ছুটিতে যান, সেই তথ্য ওয়েবসাইটেও দেয়া থাকে। আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়। অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছেন, আপনাকে নিয়ে কেন এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, এটা জানি না। তবে, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনি। এ কারণে কোনো কুচক্রী মহল এমনটা করে থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তো আছেই। অনেকেই মনে করে, বিদেশের মাটিতে আছি, ভিউ বাড়িয়ে কিছু টাকা উপার্জন করি। এতে আরেকটু ভালোভাবে চলতে পারবো। এমনটা যারা মনে করে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, সঠিক তথ্য প্রচার করুন। কারণ গুজব ছড়ানো মানবিকভাবে খারাপ কাজ, আইনগতভাবে অপরাধ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ডিবি প্রধান হারুন সিঙ্গাপুরে নিজের ও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ১৩ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটির আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তিনি আর দেশে ফিরবেন না বলে গুঞ্জন ওঠে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।