×

জাতীয়

সরকার ব্যাংকের টাকা নিলে সমস্যা হবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ০৮:৫৫ এএম

সরকার ব্যাংকের টাকা নিলে সমস্যা হবে না

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে। সরকারের এই ব্যাংকঋণ নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা নানা সমালোচনা করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এ ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতিও বাড়বে না।

গতকাল শুক্রবার বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে উত্তর দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সংকট মোকাবিলায় প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে। এর মানে ২ লাখ কোটি টাকা বাজেট থেকে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকে গেছে। এ টাকা যদি বাজারে থাকত তাহলে সরকারের ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেয়া কোনো বিষয় হতো না। এখন যেহেতু বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে, সেজন্য সরকার বন্ডের মাধ্যমে নিচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়লে যে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এমন কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ ২ লাখ কোটি টাকা তুলে এনে ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়লে টাকার সরবরাহ (ক্যাসেল আউট) কম থাকছে।

পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাকার সরবরাহ কম দাবি করে গভর্নর বলেন, আমাদের মানি সাপ্লাই যদি দেখেন ‘ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট’ এই রিজিওনের মধ্যে। জিডিপির মাত্র ৪০ শতাংশ মানি সাপ্লাই। যেটা ভারতে দ্বিগুণ, ৭৬-৭৭ শতাংশ। থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ায় প্রায় ১০০ শতাংশ। তাই সরকার ঋণ নিচ্ছে বলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এটা ঠিক নয়। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অনেকেই বলছেন আমরা ঋণ নিয়ে চলছি। আইএমএফ থেকে সর্বশেষ যে ঋণ নেয়া হয়েছে, এর সমপরিমাণ অর্থ আমাদের প্রবাসীরা দুই মাসেই দেশে পাঠায়। অর্থাৎ দুই মাসের রেমিট্যান্সের অর্থ আমরা ঋণ নিয়েছি। এটা খুব একটা বেশি ঋণ নয়।

বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটে যে বড় আকারের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে সেটা মেটাতে ব্যাংকের ওপরই নির্ভর করছে সরকার। এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বড় ধাক্কা আসবে। অর্থাৎ বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ পাবে না। আর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে।

খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ : খেলাপি ঋণ কমাতে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাসেল-৩ কাঠামো মানা হচ্ছে। খেলাপি সরকারি ব্যাংকগুলোতে ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশের মধ্যে আনতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে খেলাপি কমতে সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া কিছু ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ঋণের অনুপাত (এডিআর), খেলাপি ও তারল্য ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় রয়েছে। তাদের ডেকে সমস্যা দূর করতে বলা হয়েছে।

ক্যাশলেস সোসাইটি কীভাবে : ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ হওয়ার লক্ষ্যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি জানান, আগামী ৪ বছরের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ অর্থিক লেনদেন কাগজের টাকার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

গভর্নর বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন চালু করা। সেই লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে ৪টি জেলায় পাইলট কর্মসূচি চলছে। ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, আগে ‘ইন্টার অপারেবল’ প্ল্যাটফর্ম ছিল না। সম্প্রতি ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে একটা মাত্র মেশিনে যে কোনো পেমেন্ট কোম্পানি থেকে একটা কোড দিয়ে টাকা নেয়া যায়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা ব্যাংক একাউন্ট যার আছে, তিনি সরাসরি এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেন।

তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান গভর্নর। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্ড ছিল না। এর ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। যে ফি দেয়া হয়- এটা অনেকটা বাইরে চলে যায়। আমরা ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড তৈরি করছি। সব ব্যাংক এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এক কার্ড ব্যবহার করবে। এটার প্রচলন হলে আমরা মনে করি টাকার পরিবর্তে এই কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ডেবিট কার্ডের গ্রাহকরা দৈনিক ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন এটিএম বুথ ও পস মেশিনের মাধ্যমে। ওই মাসে মোট লেনেদন হয়েছে ৪২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ৩ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি কার্ড ইস্যু করেছে বিভিন্ন ব্যাংক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App