×

সারাদেশ

শান্তিগঞ্জে মাছের দেশে মাছের আকাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:২৫ পিএম

শান্তিগঞ্জে মাছের দেশে মাছের আকাল

ছবি: হোসাইন আহমদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ(সুনামগঞ্জ)

সুনামগঞ্জ মাছের দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু মাছের দেশে যেনো লাগল মাছের আকাল। জেলার অধিকাংশ উপজেলার মতো শান্তিগঞ্জ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) উপজেলা সদরের মাছ বাজারে মাছের আকাল (অভাব) দেখা দিয়েছে। অনান্য বছর গ্রীষ্মকালের শুরুতেই উপজেলার সবগুলো বাজারে দেশীয় মাছের মেলা হিসেবে মাছের পসরা সাজিয়ে বসতেন বিক্রেতারা।

আজ ২০ জ্যৈষ্ঠ। এখন হাওরে থাকার কথা অথৈ পানি, নদীগুলো হওয়ার কথা পানিতে টইটম্বুর। গ্রামের বাজারগুলোতে থাকার কথা দেশি মাছের ছড়াছড়ি। বছরের এমন দিনে কোথাও কোথাও বন্যার খবর শোনার কথা থাকলেও প্রকৃতির সীমাহীন খেয়ালিপনা আর অনাদরে শান্তিগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার প্রায় প্রতিটি হাওরেই এখনও চৈত্রের চিরচেনা রূপ। গ্রীষ্মের এমন দিনে ভারী বর্ষণে নদীগুলো হৃত যৌবন ফিরে পাওয়ার কথা থাকলেও কাঠফাটা রোদে নদীগুলোতে এখনো পানি জমে আছে তলানিতে। হাওর ও নদীতে পানি না থাকায় একদিকে যেমন শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাজারগুলোতে আসছে না দেশি জাতের মাছ অন্যদিকে কর্মহীনতায় ক্রমশ দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মৎস্যজীবীদের মাঝে। দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে উপজেলাব্যাপী।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক ভোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাগলা বাজার, পাথারিয়া বাজার, নোয়াখালী বাজার, শান্তিগঞ্জ বাজার, আক্তাপাড়া মিনাবাজার, ভমবমি বাজার, চিকারকান্দি বাজারসহ প্রায় সব বাজারে এখন দেশি মাছ মাছ পাওয়া যায় না। দেশি মাছের জায়গা দখল করে আছি খামারে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মৎস্য খামারে উৎপাদিত মাছের মধ্যে শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, পাবদা, পাঙ্গাস, কই, কার্প ইত্যাদি মাছই এখন ভোক্তাদের ভরসা। দেশি মাছ না পাওয়ায় একরকম বাধ্য হয়েই এসব মাছে নিজেদের মাছের চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা। চড়া মূল্যেও দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মাঝে মাঝে সামান্য দেশি মাছ পাওয়া গেলেও তার দাম শুনলে পিলে চমকে উঠতে হয় ভোক্তাদেরকে।

সরেজমিনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারের ব্রিজের পাশে মাছ বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে জাল টেনে তিন চাঙ্গা (মাছ রাখার বাঁশ-বেতের টুকরি বিশেষ) নিয়ে এসেছেন এক জেলে। এক চাঙ্গায় কিছু মলা-ঢেলা মাছ, আরেক চাঙ্গায় পুঁটি ও সামান্য ছোট টেংরা মাছ এবং আরেকটি চাঙ্গায় ৪/৫টি ছোট ও মাঝারি মানের কালি বাউস ও একটি ছোট সাইজের বোয়াল। সব মিলিয়ে আড়াই থেকে ৩/৪ কেজি ওজনের মাছ হবে। এই মাছগুলো খুচরা এক বিক্রেতা কিনেছেন ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। একজন বিক্রেতা এতো দামে মাছ কিনে থাকলে মাছগুলো তিনি কত টাকায় বিক্রি করবেন? এতেই বুঝা যায় দেশি মাছ সচরাচর বাজারে না আসায় কি পরিমান দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলে ও সাধারণ মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা খুবই চিন্তিত। হাওরে পানি আসা তো দূরে থাক, এখন পর্যন্ত নদীগুলোও পনিতে ভরে উঠেনি। নদী ভরে পাড় ডিঙিয়ে তারপর পানি হাওরে প্রবেশ করে। এরপর হাওরে জাল ফেলা যায়। মাছ উঠলে আমাদেরও লাভ, ক্রেতাদেরও লাভ। মাছ পাওয়া গেলে কম দামে বিক্রি করা যায়। মাছ কম হলেও বাজারে মাছের দাম বেশি থাকে। ক্রেতাদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।

স্কুল শিক্ষক আকিকুল ইসলাম আকিক বলেন, বাজারে এখন দেশি মাছ পাওয়াই যায় না। যদিও কিছু পাওয়াও যায়, দাম অনেক বেশি। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এতো দামে দেশি মাছ খাওয়া সম্ভব না। মাছ এখন সাধ্যের বাইরে।

অপর ক্রেতা ইছহাক আলী বলেন, মাছ কিনতে এখন মন সায় দেয় না। কারণ দেশি মাছ পাই না। বিদেশি মাছ বা ফার্মের মাছে দেশি স্বাদ পাওয়া যায় না। মাছ বিক্রেতা নূর মিয়া, সোহেল মিয়া ও মখজ্জুল মিয়া বলেন, আমরা দেশি মাছ বেচতে পারলে খুব আনন্দ পাই। হাওরে পানি থাকলে দেশি মাছ বেশি পাওয়া যেতো। এখনো পানি আসেনি। তাই মাছ কম, দাম বেশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App