×

জাতীয়

জ্বর হলে দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

জ্বর হলে দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলে প্রথম দিনেই ডেঙ্গু পরীক্ষা এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গুর পরিবর্তনশীল প্যাটার্ন, উপসর্গ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষ সেমিনারে তারা এ পরামর্শ দেন। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে এর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার নিধন, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালার প্রধান সম্পাদক অধ্যপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশররফ হোসেন। সেমিনার শেষে কেবিন ব্লকের সাধারণ জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নারের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী সারাদেশ শনাক্ত হয়। এজন্য এ বছর বাড়তি সতর্কতা জরুরি। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলেই প্রথম দিনেই ডেঙ্গু পরীক্ষা এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত এন্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকবেন। এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যাথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, শাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসক এর সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্যে মশারী ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পড়ানো, বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সাধারণ জনগণের সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গত বছর ২০২২ সালে প্রায় ৬২ হাজার আক্রান্ত হয়েছিল মারা গেছেন ২৮১ জন। এ বছর জুন জুলাই আসার পূর্বেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার কিন্তু এরইমধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন যা উদ্বেগের বিষয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি গান আছে, ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, সাদা সাদা ফোটা দেখে এডিস মশা চেনা যায়। এই মশা চিনতে হবে। এই মশাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী। নতুন বিল্ডিং তৈরি করার সময়, উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় ও বৃষ্টির পরে ছাদে পানি জমে থাকে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দায়ীদের জরিমানা করা যেতে পারে। বাড়ির পেছেন পরিস্কার রাখতে হবে। খালি পাত্র থাকলে তা উল্টো করে রাখতে হবে যাতে করে পাত্রের ভেতরে পানি জমে না যায়। শরীরে ফুল হাতার শার্ট ও পায়ে মোজার ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা জানতে জ্বর হলে শুরুতেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করে নিতে হবে এবং জ্বর হলেই এ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ফলমূলসহ পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ডেঙ্গু প্রথমবার হলে মৃত্যু হার কম কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার হলে মৃত্যুহার বেশি। যারা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরণের রোগে ভুগছেন তাদেরকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জ্বর হলে প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাড়তি টেস্ট ও বারবার টেস্ট না দেয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্লাটিলেট কমে গেলেই রক্ত দিতে হবে- এই ধারণা ভুল। আবার রক্ত দেয়া যাবেই না এটাও ঠিক না। রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত রোগীকে কি কি চিকিৎসা দিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. আবুল কালাজ আজাদ বলেন, ডেঙ্গু ও কোভিডে একই ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। উভয় রোগেই জ্বর, সর্দি, কাশির লক্ষণ দেখা যায়। এ জন্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু ও কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীও অনেক পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App