×

সাহিত্য

‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম

‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’

রবীন্দ্রনাথের গানের সুর ও কথামালায় স্মরণ করা হলো বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কলিম শরাফীকে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের নমস্য এই শিল্পীর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রবীন্দ্রসংগীতের সুরের সুধায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় শিল্পীকে।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যায় তারই হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা রাজধানীর ধানমন্ডির ইউল্যাব মিলনায়তনে আয়োজন করেছে বরেণ্যে এই শিল্পীর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান।

শুরুতে প্রদর্শিত হয় ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’ শিরোনামে নিশাত জাহান রানার চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় চল্লিশ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র। যেখানে তুলে ধরা হয় শিল্পী কলিম শরাফীর স্মৃতিকথা, সংস্কৃতি-বৈরি পরিবেশের নানা বাধা-বিপত্তির কথা।

প্রামাণ্যচিত্রের পর কলিম শরাফীর কণ্ঠে রেকর্ড করা পাঁচটি গান বাজিয়ে শোনানো হয়। গানগুলো হলো- ‘আমি তখন ছিলেম মগন গহন’, ‘এসো আমার ঘরে’, ‘পুব সাগরের পার হতে’, ‘বঁধু, তোমায় করব রাজা’ ও ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’। এরপর অতিথিদের নিয়ে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান।

স্মৃতিচারণ পর্বে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো সঙ্গীততর্পনে অংশ নেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার শিল্পী লিটন বৈদ্য, শাহরিয়ার ইসলাম অর্ণব, নুরুল ইসলাম, শিল্পী সাবরিনা খান তন্দ্রা, প্রান্তিকা সরকার, বিজয় সরকার, কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল, সুমাইয়া ইমান ইমা, দেবযানী মিত্র, উৎপলা দাশ, রিদওয়ানা আফরিন সুমি, জয়িতা তালুকদার ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পীরা।

বাইরের তাপদাহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনের ভেতরে রাবীন্দ্রিক সন্ধ্যাটি রবীন্দ্র গানের সুরে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেন শিল্পীরা। যেখানে কথার পিঠে কথা সাজিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় রবীন্দ্রনিবেদিতপ্রাণ শিল্পী কলিম শরাফীকে।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান, গবেষক ও শিক্ষক কাজী মদিনা, সঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠক মাহমুদ সেলিম, কলিম শরাফীর ভাগিনা আনজুম আহমেদ ও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া। স্মৃতিচারণায় শিল্পী হাশেম খান বলেন, কলিম শরাফীর মতো মানুষ এখন আমাদের বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরেই । দেশ ও গানের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার গানের সংগ্রাম এখনও যেমন মানবমুক্তির দিশা দেখায় তেমনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রাণশক্তি যোগায়।

বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি বলেন, গোটা শিল্পীসমাজের কাছেই কলিম শরাফী ছিলেন বাতিঘর। শিল্প ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক পথে ছিল তার বিচরণ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি গেয়েছেন গণসঙ্গীত। আবার সঙ্গীত শেখানোর কাজটিও করেছেন গভীর মনোযোগে। এমনকি কীর্তিমান এই মানুষটি চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছেন। উল্টোদিকে তার ভেতরে সব সময়ই বিরাজ করেছে একটি প্রতিবাদী সত্তা। এ কারণে সব প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামেও রেখেছেন সোচ্চার ভূমিকা।

অতিথিরা বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গানেও ছিল কলিম শরাফীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ছয় দশকেরও বেশিসময় ধরে তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রেখেছিলেন নিজেকে। দেশের সবকটি জাতীয় আন্দোলনসহ নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন কলিম শরাফী। প্রগতিশীলতার মশাল হাতে সেই তরুণ বয়সে যে সংগ্রাম তিনি সূচনা করেছিলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলেন কলিম শরাফী।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় সমবেত সঙ্গীত ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী তানজীনা তমা। সমাপনী বক্তব্য দেন পীযূষ বড়ুয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App