×

মুক্তচিন্তা

জনজীবনে জ্বালানি সংকটের প্রভাব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ১২:৪৯ এএম

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সুবাদে জানা যায়, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সংবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জ¦ালানি সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি পুরোপুরি বন্ধ এবং অন্যটির সক্ষমতা অর্ধেক। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরোটাই বন্ধ থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টিকে সাধারণ মনে হলেও বিষয়টি মোটেও সাধারণ নয়। এই জ¦ালানি সংকট দেশের অর্থনীতিতে আনবে ভয়াবহ পরিবর্তন। যার মূল্য দিতে হবে পুরো দেশবাসীকে। মূলত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পেছনে দায়ী কয়লা সংকট। বিবিসির দেয়া তথ্যমতে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানোর জন্য দৈনিক ১৩ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয় কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে মজুত আছে মাত্র ৫০ হাজার টন কয়লা, যা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা কিনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো, এটা কি দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে? অবশ্যই, এটি দেশের অর্থনীতিতে চরম প্রভাব ফেলবে। একটু চিন্তা করলেই এর কারণটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জানা যায়, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হলো দেশের সব থেকে বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেটি ২৪৮ কোটি ডলার ব্যয়ে ২০২০ সালের মে মাসে চালু করা হয়। দেশের দৈনিক উৎপাদিত ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে (সূত্র: বিবিসি), যা মোট বিদ্যুতের অনেকটাই জোগান দেয়। এখন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যদি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, তবে দেশের মোট বিদ্যুৎ ঘাটতির সঙ্গে আরো ১৩২০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে। দেশে ইতোমধ্যে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। এমন অবস্থায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ হলে এই ঘাটতি পৌঁছাবে দুই হাজারে। যার প্রভাবে দেশে সৃষ্টি হবে অতিমাত্রায় লোডশেডিং। এতে একদিকে যেমন দীর্ঘ লোডশেডিং এর প্রভাবে ব্যাহত হবে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা অন্যদিকে, ডলার সংকট কমিয়ে কয়লা আমদানির জন্য বাড়বে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যেই বস্ত্র খাতে উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে এবং হুমকির মুখে টেক্সটাইল খাতের ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ (সূত্র: ইত্তেফাক)। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা হবে আশঙ্কাজনক। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে আমরা সোলার সিস্টেম ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া প্রয়োজন ব্যতীত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পারি। এতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তা বিদ্যুৎ ঘাটতি কিছুটা হলেও কমিয়ে দেবে। জ¦ালানি সম্পর্কিত সরকারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার মতে, দেশে প্রতি বছর গ্যাসের প্রয়োজন এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসাবে বাংলাদেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু‘ দৈনিক উৎপাদন হয় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যায়। আবার মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৪০ শতাংশ যেহেতু ব্যবহার হয় বিদুৎ উৎপাদনে (সূত্র: বিবিসি), যার ফলে অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন- শিল্পকারখানা, গৃহস্থালি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্যাসের সংকট দেখা দেবে প্রকটভাবে। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম হবে লাগামহীন। জীবনযাত্রার মান হবে বিপর্যস্ত। এমন অবস্থায় প্রশাসনের উচিত প্রয়োজনীয় জ¦ালানি গ্যাসের সরবরাহ করা এবং গ্যাস উত্তোলনে অন্য দেশের সাহায্য না নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের উচিত জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে জ¦ালানি গ্যাসের সংকট কমানোর জন্য বায়োগ্যাস বা জ¦ালানি কাঠ ব্যবহার করা। উপরের বিষয়গুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করলে তবেই জনজীবনের দুর্ভোগ কমবে এবং জীবনযাত্রায় আসবে স্বস্তি, অন্যথায় এই দুর্ভোগ পৌঁছাবে চরম পর্যায়ে।

মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App