×

আন্তর্জাতিক

ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত শতাধিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ১০:০০ পিএম

ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা, ওড়িশায় মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ, দুমড়ে মুচড়ে গেছে ১২-১৩টি বগি

ভারতের ওড়িশা প্রদেশে বালেশ্বরের কাছে কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে শতাধিক নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩ শতাধিক মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশা রাজ্যের বালেশ্বরের কাছে মালবাহী আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেলে হাওড়া শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে এ ঘটনা ঘটে। অন্তত ১২-১৩ বগি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। শুক্রবার (২ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। অনেকে ট্রেনের বগির নিচে চাপা পড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশের অনেকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশি অনেকে চিকিৎসার নিতে কলকাতা থেকে ওই ট্রেনটিতে করে ভেলরে আসা-যাওয়া করেন। যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদবে, নজর রাখছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন। মিশন জানিয়েছে, আমরা পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। সম্পূর্ণ বিষয়টার ওপর মনিটরিং শুরু করেছি।

এদিকে, এই দুর্ঘটনাকে গত কয়েকবছরের মধ্যে ভারতে ঘটা দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে মন্ত্রীর মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা। তিনি বলেন, উদ্ধার তৎপরতা চলছে। শোক জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যের সচিব ও অপর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেণ করছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নভীন পাটনায়েক রাজ্যের রাজস্বমন্ত্রী প্রমিলি মালিককে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্ঘটনা এতোই ভয়াবহ যে, হাওড়া স্টেশনে রেলের প থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। হেল্পলাইন নম্বর জানিয়েছে রেল। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৬৩৮২২১৭, পাশাপাশি, বালেশ্বরে কন্ট্রোল রুম ৭৯৭৮৪১৮৩২২। রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। হাওড়া থেকে দণি ভারত যাওয়ার সব ট্রেন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওড়িশাগামী ট্রেনও। এর ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

রেল সূত্রের খবর, অন্তত ১২-১৩ বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত শতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৫০ জন জানানো হয়েছে। আর আহত বলঅ হয়েছে দুই শতাধিক যাত্রী। তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রত্যদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি চূড়ান্ত আশঙ্কাজনক, মৃতের সংখ্যা ২০০ পার হয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, একই লাইনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও একটি মালগাড়ি চলে আসার প্রায় একই সময় অন্য লাইনে দিয়ে আসছিল হাওড়াগামী যশোবন্তপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের ধাক্কার অভিঘাতে যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসও সামনের তিনটি বগি তিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও দুই এক্সপ্রেসের বহু যাত্রী আটকে রয়েছে। যশবন্ত এক্সপ্রেস আসছিল হাওড়ায়। রেলের তরফে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। খবর দেয়া হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। ৬০টি দমকল ও দুটি ক্রেন উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে সহযোগীতা করছে। তবে, ঠিক কী কারণে মালগাড়ির সঙ্গে একেবারে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জানা গেছে, স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া তিনটার দিকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এরপর পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে বিকেল সোয়া পাঁচটায়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ট্রেনটি পৌঁছায় ওড়িশার বালেশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের সজোরে মালগাড়িকে ধাক্কা দেয় চেন্নাইগামী ট্রেনটি। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমন্ডলের ২৩ বগির ট্রেনটি।

রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলো ছিটকে পড়ে উল্টো দিকের লাইনে। কিছুণ পর উল্টো দিকে লাইন দিয়ে আসে হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনটি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিটকে পড়া বগির ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে লাইনচ্যুত যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও তিন-চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা বলেছেন, দুর্ঘটনায় তৃতীয় আরেকটি ট্রেন জড়িত ছিল। প্রায় ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করছে। আহতের সংখ্যা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। আহতদের হাসপাতালে নিতে বিপুল সংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ওড়িশার দমকল বাহিনীর প্রধান সুধাংশু সরাঙ্গি উদ্ধার অভিযান তদারকি করছেন। বালেম্বরের হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় দুর্যোগ ত্রাণ বাহিনীর শতাধিক সদস্য আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দুর্ঘটনায় পড়া বগি কাটার কাজ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App