×

সারাদেশ

একই সঙ্গে দুই পদে বহাল!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম

একই সঙ্গে দুই পদে বহাল!

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা আনসার ভিডিপির ঝিকরগাছার ৯ নং ওয়ার্ড দলনেতা আসাদুল ইসলামের ছয় মাস বেতন বন্ধ রয়েছে। তারপরেও তিনি থেমে নেই। দলনেতার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আসাদুল আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগের পরও একাই দু’টি পদে বহাল থাকায় তার খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৫ সালের ২০ মে ঝিকরগাছা উপজেলার আনসার ও ভিডিপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দলনেতা হিসেবে যোগদান করেন আসাদুল ইসলাম। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার হাজেরালী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের ছেলে।

অভিযোগ উঠেছে, দলনেতার চাকরি করাকালীন আসাদুল ইসলাম হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের উন্নয়নের লক্ষে স্থাপিত ভিডিপি ব্যাংকে মাস্টাররোলে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি বাগিয়ে নেন।

সূত্র জানায়, প্রতি মাসে তিনি দলনেতার পদ থেকে ২৫শ’ টাকা ও কম্পিউটার অপারেটর পদ থেকে ৭ হাজার ৯৫০ টাকা বেতন উত্তোলন করে আসছিলেন। আসাদুল ইসলাম আনসার ভিডিপির দুই স্থানে চাকরি করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এরই মাঝে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা দুর্নীতিতে। আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ঝিকরগাছা থেকে জেলা কম্যান্ডেট ও উপজেলা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ঋণ উত্তোলনের ঘটনায় আসাদুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়।

ঝিকরগাছার উপজেলার রবিউল ইসলামের ছেলে আল এমরান লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন আসাদুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি অবৈধভাবে একই প্রতিষ্ঠানের দুই স্থানে চাকরি করেন। অথচ নিয়মানুযায়ী একই ব্যক্তি দুই স্থানে চাকরি করে বেতন উত্তোলন করতে পারেন না।

আসাদুল ইসলাম চাকরির সুবাদে ব্যাংকে বসে উপজেলা কর্মকর্তা ও জেলা কমান্ড্যান্টের স্বাক্ষর জাল করে সুজন আহম্মেদ, আবু কায়ূমসহ আরও কয়েকজন সদস্যের লোনের ব্যবস্থা করে দেন।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আসাদুলের ভাই আশিকুর রহমানকে আনসার ভিডিপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দলপতি হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ করানো হয়। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দলপতি হিসেবে চাকরি করা নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। চাকরির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে এই সুযোগ লুফে নেয় তারা। আশিকুরের বয়সের ক্ষেত্রে করা হয় জালিয়াতি। কেননা ওয়ার্ড দলপতি নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স ২২ বছর হতে হবে। কিন্তু আসল জাতীয় পরিচয়পত্রে ওই সময় আশিকুর রহমানের বয়স ছিলো ২১ বছর ৯ মাস ১০ দিন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে অনিয়ম দুর্নীতির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুচতুর আসাদুল ইসলামের বেতন বন্ধ করা দেয়া হয়। গত ছয় মাস তিনি দুই স্থানের একটি থেকে বেতন পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেতন বন্ধ থাকলেও আসাদুল থেমে নেই। দিব্যি নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। বেতন বন্ধ থাকা নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ (ব্যবস্থা) করে একই প্রতিষ্ঠানের দুই স্থানে চাকরির সুবাদে অনিয়ম করে সুবিধা ভোগ করছেন।

এ বিষয়ে আনসার ভিডিপির ঝিকরগাছা উপজেলা কর্মকর্তা আনোয়ারা খাতুন মুঠোফোনে জানান, ঝিকরগাছায় সুষ্ঠুভাবে চাকরি করা খুবই কষ্টকর। এখানে একজন আরেকজনের পেছনে লেগেই থাকে।

তিনি বলেন, ঝিকরগাছা ৯ নং ওয়ার্ড দলনেতা আসাদুল ইসলাম মাস্টাররোলের কর্মচারী। সামান্য বেতনে জীবন-যাপন করা কষ্টদায়ক। তাই দলনেতার পাশাপাশি ব্যাংকে চাকরি নিয়েছেন তিনি। আসাদুলের মতো এমন আরো অনেকেই আছেন।

এক প্রশ্নে আনোয়ারা খাতুন বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আসাদুলের বেতন ছয় মাস বন্ধ আছে।

আনসার ভিডিপির যশোর জেলা কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, ঝিকরগাছার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দলনেতা আসাদুল ইসলামের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের নির্দেশে তার (আসাদুল) ছয় মাস বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।

চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ তার কাছে আসেনি। একই প্রতিষ্ঠানের দুই স্থানে আসাদুলের চাকরি করার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App