×

জাতীয়

‘ভোটার সন্তুষ্টি’র বাজেট আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম

‘ভোটার সন্তুষ্টি’র বাজেট আজ

ফাইল ছবি

আইএমএফের শর্তে বাড়ছে কর রাজস্ব মোট ব্যয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা

নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে জাতীয় সংসদে আজ পেশ করা হবে ভোটার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন।

নির্বাচনের বছরগুলোতে সাধারণত ‘নির্বাচনের চিন্তা মাথায় রেখে’ বাজেট ঘোষণা করা হয়। এবারো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের নিম্নমুখিতা, বছরজুড়ে ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আইএমএফের ঋণের শর্ত মাথায় রেখেই আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ‘দেড় দশকের উন্নয়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।

অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেট সরকারের পছন্দমতো দিতে পারছেন না। মাথায় রাখতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা- আইএমএফের হরেক রকম শর্ত। আইএমএফ সাড়ে ৩ বছরের বাস্তবায়নের জন্য দিয়েছে মোট ৩৮টি শর্ত, যার প্রায় অর্ধেক শর্তই আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। ফলে নির্বাচনী বছরে জনগণকে দেয়ার পরিবর্তে আদায়ে জোর দেয়া হচ্ছে। এতে স্বস্তির বদলে বাড়ছে বাড়তি কর দেয়ার অস্বস্তি। দেশের ডলার সংকট কাটাতে সেই শর্ত পূরণের আলোকেই অর্থমন্ত্রী এবার তার টানা পঞ্চমবারের বাজেট প্রণয়ন করেছেন।

অপরদিকে নির্বাচনী বছরে সরকার এবার উত্তোরণের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান ৫ বছরের মেয়াদের শেষ বাজেট হবে এবার। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আগামী নির্বাচনের স্লোগান হচ্ছে ‘স্মাট বাংলাদেশ’। সেই স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়ার অভিপ্রায়েই অর্থমন্ত্রী বাজেটকে সাজিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী ভোরের কাগজকে বলেন, অর্থনীতির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সরকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বাজেটে বেশ কিছু বিষয় প্রত্যাশা করতে পারি। যেমন- আমাদের ম্যাক্রোঁ ইকোনমিতে যে টানাপড়েন চলছে,

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তির আলোকে এগুলো থেকে উত্তোরণের একটি পন্থা বাজেটে থাকতে হবে। পাশাপাশি ম্যাক্রোঁ ইকোনমিতে সংস্কারের গতিধারার একটি রূপরেখা এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও বাজেটে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতির দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠে আবার কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির গতিপথে ফিরে যাওয়ার রূপরেখা থাকতে হবে। তৃতীয়ত, আমাদের সামাজিক উন্নয়নের যে ধারা আছে, যেমন-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা- এসব জায়গায় জোর দেয়ার প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু আগামী ৬ মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই উন্নয়নের গতিধারা যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, একই সঙ্গে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারি, সে বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত অনেক কম। তাই করজাল ও রাজস্ব বাড়ানো আবশ্যক। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া যেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় না ফেলে। এছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় থাকবে এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (৬৪ দশমিক ২৬ শতাংশ) এবং বিদেশি প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা (৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ)।

এ বিশাল বাজেটের বিপরীতে আগামী অর্থবছরে জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খাত বহির্ভূত (নন-এনবিআর) থেকে আয় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে (এনটিআর) ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে ঘাটতি পরিমাণ পাঁচ দশমিক ২ শতাংশ। এই ঘাটতি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ, বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রির অর্থ দিয়ে মেটানো হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য এবং টাকার মান কমায় ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে। বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা : আগামী বাজেটে সার্বিক ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণপ্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এটির বিক্রিতে চলতি বছরের ধস নেমেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি : সরকার আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি ধরে রাখতে চায়। চলতি অর্থবছরেও একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্বালানি তেলের অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহার করতে চায় সরকার। কারণ দেশের মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হচ্ছে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য। আইএমএফকে খুশি করতে ভর্তুকি কমাতে গিয়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে সরকার।

জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লাখ ছয় হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ ৪৯ কোটি ৯৫৯ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে।

কর ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন : এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এ কারণে দেশের কর ব্যবস্থায় আনতে হচ্ছে বড় পরিবর্তন। আইএমএফ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে নির্বাচনী বছরের বাজেট সত্ত্বেও কর ব্যবস্থায় আনতে হচ্ছে এই পরিবর্তন। যেতে হচ্ছে কর কাঠামোর সংস্কারে। কারণ আইএমএফ শর্ত দিয়েছে আগামী অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত অন্তত দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আয় আগামী অর্থবছরে বাড়াতে হবে। যা সেপ্টেম্বরের আগে বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে।

বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন সনদধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এরমধ্যে ৩২ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তারমধ্যে আবার আট লাখের করযোগ্য আয় নেই। তাই করযোগ্য আয় না থাকলেও বিভিন্ন সেবা নিতে কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যারা নেবেন, তাদের ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রমাণপত্র পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপ হতে পারে। বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগে। আগামী অর্থবছরে এর সঙ্গে আরো ছয় ধরনের সেবা যুক্ত হতে পারে।

ইতোমধ্যে কিছু কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ থাকবে। বেশ কিছু অব্যাহতির ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে।

নতুন কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হতে পারে আগামী বাজেটে। যেমন-মোবাইল ফোন উৎপাদন পর্যায়ে এখন ভ্যাট নেই। এক্ষেত্রে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। স্থানীয় এলপিজি সিলিন্ডারের মূল কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্কও কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। আগামী বাজেটে এ খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। একইভাবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজষপত্রের ভ্যাট বাড়ানো হতে পারে। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু বা পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনেও ভ্যাটের হার বাড়ানো হতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ফি বা সেবা মাশুল আগামী বাজেটে বাড়তে পারে। জমির নামজারি ফি, হাটবাজারের ইজারা মূল্য, চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য, এমনকি রেশনে দেয়া চাল, ডালের দামও বাড়ানো হতে পারে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাড়তে পারে ভ্রমণ অথবা চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনে বিমান টিকেটের ওপর ভ্রমণ কর। অন্যদিকে আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ২০০ টাকা ভ্রমণ কর আরোপ হতে পারে। এছাড়া ডলার সাশ্রয়ে এবং শুল্ক ফাঁকি রোধে কাজুবাদাম, খেজুরের মতো খাদ্যসামগ্রীর আমদানি শুল্ক বাড়তে পারে। এসব শুল্ক কর বাড়লে আগামী বাজেট জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে।

মিলবে কিছুটা স্বস্তি : কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে কিছুটা স্বস্তি মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেমন, জ্বালানি তেলের ওপর থেকে অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জ্বালানি তেলের দাম বিভিন্নভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে; তাই তেলের দাম কমলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন একাই সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আসন্ন বাজেটে আরো ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত দিতে পারে সরকার। স্থানীয় উৎপাদনের বেলায় শুল্ক মওকূফ বিবেচনা করা হচ্ছে বিধায় ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, যক্ষ¥া, ম্যালেরিয়া, আইভি ক্যানুলার ওষুধের দামও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার ও টয়লেট্রিজের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ এক বছর বাড়তে পারে। আগামী বাজেটে তরল নিকোটিন এবং ট্রান্সডার্মাল নিকোটিন প্যাচের উপর ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। পাশাপাশি ই-সিগারেট, ভেপ এবং এ জাতীয় ডিভাইসগুলোর ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে ২১২.২০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে। তাছাড়া, চিনির দাম এখন বেশি হলেও, আগামী অর্থবছরে মিষ্টির দাম কমতে পারে।

বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুন করে আরো ৭ লাখ ৩৫ লাখ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়বে ৫ লাখ ৩৫ হাজার। এছাড়া, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে এক লাখ করে।

প্রায় এক দশক পর আগামী অর্থবছর বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। বয়স্ক ভাতার উপকারভোগীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছরে এ খাতে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছর ব্যয় বাড়বে ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে সারচার্জ : কার্বন নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ কমাতে সরকার যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য আগামী অর্থবছর থেকে একাধিক গাড়ির মালিককে কার্বন ট্যাক্সের মুখোমুখি হতে হবে।

গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা খাত : জাতীয় নির্বাচন সামনে। তাই এবারে বাজেটে ‘জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা’ খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিট বাজেটের ৫৫ শতাংশই ব্যয় হবে পুলিশ বাহিনীতে। বাকি ৪৫ শতাংশ ব্যয় হবে বিজিবি, কোস্ট কার্ড, আনসার এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগে। তবে পুলিশের সঙ্গে বরাদ্দ বাড়ছে আনসার বাহিনীতেও। এমন হিসাব ধরে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৯ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। বরাদ্দের পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে সুরক্ষা সেবা বিভাগে অগ্রাধিকার পাচ্ছে অগ্নিনির্বাপণ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোসহ সাতটি খাত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App