×

মুক্তচিন্তা

অনলাইন জুয়ার থাবায় পথ হারাচ্ছে তারুণ্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ০২:০২ এএম

দেশে নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জুয়া খেলা বহু পুরনো এবং প্রচলিত এক প্রকার অবসর-বিনোদনের মাধ্যম। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে জুয়ার অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে অনলাইন জুয়াতেই এখন মানুষের অংশগ্রহণ বেশি। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। এ জুয়ার আসর শহর ছাড়িয়ে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে চলে এসব জুয়ার আসর। মোবাইল ফোনে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস ডাউনলোড করে সেই অ্যাপসের লিংক অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে চালানো হয় জুয়া। কোভিডের সময় ঘরবন্দি অনেক মানুষ সময় কাটাতে গিয়ে অনলাইন জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। ওয়ানএক্সবেট, বেটবাজডট৩৬৫, ক্রিকেক্স, বেট৩৬৫এনআই ও মসবেটসহ বিভিন্ন জুয়ার সাইটে টাকা পাচার হচ্ছে। চক্রগুলো হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সি, মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জুয়ার টাকা লেনদেন করছে। প্রথমে অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরু করে খেলা। এক পর্যায়ে লোভে পড়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব জুয়ার সাইট বাংলাদেশেও পরিচালনা করছে তাদের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। জুয়ায় টাকা ঢুকালে সাব-এজেন্টরা ৫ শতাংশ কমিশন পায়। আবার টাকা কেউ উঠালে ৭ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। একজন সাব-এজেন্টের আন্ডারে যদি প্রতিদিন ২০ লাখ টাকাও জুয়ায় লেনদেন হয়, তা হলে কমিশন হিসেবে তিনি ১০-১৫ হাজার টাকা পান। সাব-এজেন্টের কয়েকগুণ বেশি কমিশন পান মাস্টার এজেন্ট। সাব-এজেন্ট সাধারণ জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। টাকা গ্রহণ ও উত্তোলন মূলত সাব-এজেন্টদের মাধ্যমেই হয়। ওয়ার্ল্ড গ্যাম্বলিং মার্কেট রিপোর্ট অনুযায়ী, অনলাইন জুয়ায় বাজারমূল্যের সূচক ঊর্ধ্বমুখী। ২০২২ সালে শুধু অনলাইন জুয়ার বাজারমূল্য ছিল ৬ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর ব্যাপ্তি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েক হাজারের বেশি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে সরকার কিন্তু জুয়ার সাইট এ দেশে বন্ধ করলেও জুয়াড়িরা ভিপিএন বা অন্য উপায়ে ঠিকই সাইট ব্যবহার করছে। জুয়ার মাধ্যমে যে শুধু দেশের কিংবা ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। জুয়ার কারণে সংসারে অশান্তি, সন্তান বা সঙ্গীর বিপথগামিতা, বিবাহ বিচ্ছেদ, ত্যাজ্য সন্তানে পরিণত হওয়া, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মতো সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত আজ অসংখ্য পরিবার। অন্যদিকে দেউলিয়া হয়ে পথে বসা, ব্যবসার ভরাডুবি, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া, সম্পত্তি বিক্রি, অলংকার আসবাব বিক্রি করার মতো অর্থনৈতিক সংকটও ঘটছে জুয়ায় আসক্তির কারণে। চূড়ান্ত পরিণতিতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। জুয়া খেলায় আসক্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে তার সমস্যাটা ভালো করে বুঝতে হবে এবং এই নেশা থেকে বের হতে তাকে উৎসাহ দিতে হবে। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং অতীতের কথা আলোচনা করা যাবে না। শুধু বর্তমানের সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে এবং জুয়া কীভাবে একজন মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে সেই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। এক্ষেত্রে জুয়ার নেশায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বুঝিয়ে বলতে হবে। একজন জুয়াড়িকে সতর্ক করতে হবে। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, জুয়ার জন্য জুয়ারি তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। মানুষকে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক সবদিক থেকেই পুঙ্গ করে মেরে ফেলার মতো মানববিধ্বংসী এই মোবাইল জুয়া কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তাই সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। আফরোজা আক্তার : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App