×

মুক্তচিন্তা

প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:৪৭ এএম

পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী, এর বিভিন্ন উপজাত, প্লাস্টিকদ্রব্য নিঃসরিত অণু ইত্যাদি যখন মাটি, পানি, বায়ু, সামুদ্রিক ও বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটি হলো প্লাস্টিক দূষণ। অন্যভাবে বলা যায়, প্লাস্টিক দূষণ হলো পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক বর্জ্যরে আহরণ, যা পরবর্তী সময়ে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল, জল, স্থল এবং সর্বোপরি মানবগোষ্ঠীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপন্ন হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যরে ১০ শতাংশ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলছে প্রতিনিয়ত। এসব অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে প্রায় ১০০০ বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকতে পারে, যা প্রতিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিক ব্যাগের বর্জ্য তৈরি করছি। এই প্রেক্ষাপটে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামী ৫ জুন পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৩। প্লাস্টিক হলো কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাস্ম জ¦ালানি থেকে রাসায়নিকভাবে তৈরি করা হয়। শিল্পায়ন ও নগরায়ণ সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনের একটি অংশ হিসেবে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর এলাকায় মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনবৈচিত্র্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। খাবার, দৈনন্দিন বাজার, শপিং, সুপারশপ, অনলাইন কেনাকাটা প্রতিটি পণ্যের মোড়কে দিন দিন ব্যবহার বাড়ছে প্লাস্টিকের, যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ। প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটায়, যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে প্রতিনিয়ত। এক গবেষণায় দেখা যায়, প্লাস্টিক বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর ফলে ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৮.৫ কোটি টন কার্বণ ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য একক সর্বাধিক হুমকিস্বরূপ। যেমন সামুদ্রিক মৎস্য, কচ্ছপ, তিমি ও সামুদ্রিক পাখির খাদ্য ও জীবন প্রণালিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে প্রতি বছর ১ লাখ সামুদ্রিক পাখি ও ১০ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু তিমি ও মাছের মৃত্যুর পর তাদের পাকস্থলিতে প্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। সমুদ্রের পানিতে প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে এবং প্রতি বছর ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক প্রতিনিয়ত সমুদ্রে জমা হচ্ছে। সমুদ্র থেকে আহরিত প্রতি তিনটি মাছের মধ্যে ১টি মাছের পেটে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এন্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গবেষণায় দেখা যায়, বাজার-সংশ্লিষ্ট পণ্য ব্যবহার করা প্লাস্টিক ব্যাগ মাটিতে মিশতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর; প্লাস্টিক কাপের ক্ষেত্রে সময় লাগে ৫০ বছর, অন্যদিকে ডায়াপার ও প্লাস্টিক বোতল প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে প্রায় ৪৫০ বছর। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮৭ হাজার টন সিঙ্গেল ইউস প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্য রিসাইকেল হয় না বলে বছরের পর বছর নালা, খাল-বিল তথা প্রকৃতিতে বিরজমান থেকে যায়। সুতরাং প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, যেমন গৃহস্থালি পর্যায় থেকেই প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্য পৃথক করা; সিঙ্গেল ইউজ পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় অথবা পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; পানীয় জাতীয় দ্রব্যে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান; প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনায় প্রণীত আইনের কঠোর প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা; সরকার, নাগরিক সমাজ, প্লাস্টিক উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নেয়া; প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই সচেতন নাগরিক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ; প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনায় ‘থ্রি আর’ ধারণাকে ব্যাপক প্রচারের আওতায় আনা; সর্বোপরি প্লাস্টিকের ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন হতে হবে।

ড. মো. ইকবাল সরোয়ার : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App