×

আন্তর্জাতিক

কুশীলবদের খেলায় কোণঠাসা ইমরান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৮:৫০ এএম

কুশীলবদের খেলায় কোণঠাসা ইমরান

ইমরান খান

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন। মানুষের মননে মনোজগতে প্রায় ৭৫ বছরের তৈরি করা যে ভাবনা, সেই ভাবনা থেকে বের হয়ে আসার স্বপ্ন দেখাটাও যে অবান্তর, তা-ই যেন মূর্ত হয়ে উঠছে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে। যেহেতু একটি দলকে ক্ষমতায় আসার জন্য শুধু নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত ও টিকে থাকতে গেলেও যে পাকিস্তানের সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সমর্থন ও আনুকূল্য প্রয়োজন। পিটিআই নেতাদের দল ছাড়ার হিড়িক দেখে তা-ই যেন ফুটে উঠছে।

রাজনীতির মহানাটক : রাজনীতির মহানাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে পাকিস্তানে। আর সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট ও শাহবাজ শরিফ সরকারের স্পটলাইটে রয়েছেন ইমরান খান। বিশ্বজয়ী পাক অধিনায়কের ইনিংসে ইতি টানতে মরিয়া সামরিক অধিনায়করা। তবে জনবলে বলীয়ান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ময়দান ছাড়তে নারাজ। এহেন পরিস্থিতিতে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। আবারো অনিশ্চয়তার দোলাচলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

সামরিক কুশীলবদের খেলা : আপাতত অনেকটা নিঃসঙ্গ এবং শান্ত বলে মনে হচ্ছে পিটিআই নেতাকে। পাঞ্জাবের ৭০ জন সাবেক এমপিএ এবং নেতা ইমরান খানের দল পিটিআই ছেড়ে পিএমএল-কিউ বা পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে) যোগ দিচ্ছেন। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত ৯ মে দেশব্যাপী সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে তারা সম্প্রতি পিটিআই ত্যাগের ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। পাশাপাশি সাংবাদিক নিখোঁজ, সামরিক আদালতে বিচার, নারী কর্মীদের হয়রানিসহ পিটিআইয়ের ওপর চাপ বাড়ছেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর ইতিহাসের সব চেয়ে ভয়ানক আন্দোলন অবলোকন করেছে পাকিস্তান। এরপর গণহারে দলটি ছেড়ে যেতে শুরু করেন নেতারা। অথচ যেখানে আরো বেশি উজ্জীবিত হওয়ার কথা ছিল পিটিআই নেতাদের। মূলত এখানেই সামরিক কুশীলবদের খেলা। কারণ যেসব রাজনীতিবিদের উত্থান তাদের হাতে কিংবা তাদের ডিভাইসে রয়েছে যেসব রাজনীতিবিদের গোপন দলিল, তারা আস্তে করে লেজ নামিয়ে সুড়সুড় করে দল ছাড়ছেন। তাতেই মনে হচ্ছে, দুর্বল হচ্ছে ইমরান ও তার দল পিটিআই। যদিও ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে, তার দলের নেতাদের জোরপূর্বক দলত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এই এমপিএদের নেতৃত্বে রয়েছেন পিটিআই প্রেসিডেন্ট চৌধুরী পারভেজ এলাহির জ্ঞাতিভাই চৌধুরী শুজাত হুসাইন।

পরিষ্কার নয় ভবিষ্যৎ : পিটিআইকে হ্যান্ডেল করা হলেও অন্য কিছু এখনো পরিষ্কার নয়। রাজনীতিকে ঘিরে বৃহত্তর প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে অপরিষ্কার। এই মুহূর্তে দেশ শান্ত থাকা সত্ত্বেও আগামী দিনগুলো এবং ভবিষ্যতের রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিছু বিষয়ে একমত না হলে, পাকিস্তান তাদের রাজনীতির নিজস্ব প্যাটার্ন থেকে যে বের হতে পারছে না, এমনটাই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। অর্থাৎ আবারো সামরিক শাসন বা গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি। পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় (কেপি) নির্বাচিত সরকার নেই এবং জাতীয় পরিষদের মেয়াদও শেষের দিকে। পিটিআই এখন আর আন্দোলন করার মতো অবস্থায় নেই। সেখানে যদি নির্বাচন হয় তাহলে ইমরানের দলই যে জিতবে তা নিশ্চিত। আর যদি না হয় তাহলে কীভাবে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো দেশের ক্ষেত্রে সত্য যে, রাষ্ট্র অপেক্ষা সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী।

ইমরানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার : পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তুমুল চাপের মধ্যে কয়েকটি সপ্তাহ পার করলেন। দেশের মধ্যে বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও সামরিক স্থাপনায় হামলাকে ঘিরে তার দল নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। নিজেও সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। এমন সব আশঙ্কা মনে থাকলেও পিটিআই চেয়ারম্যান কিন্তু এখনো অবিচল। তিনি বলেন, আপনারা মনে করতে পারেন এটা আমার জন্য বড় সংকট। কিন্তু আমি মনে করছি না। ইমরানের চোখেমুখে দৃঢ়তার ছাপ।

নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন, সেই আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টায় কার্পণ্য করেননি পিটিআই চেয়ারম্যান। কিন্তু দলের নেতাকর্মী তাতে আস্থা রাখছেন বলে মনে হচ্ছে না। বিবিসিকে ইমরান বলেন, প্রথমত যারা চলে গেছে তাদের জায়গাগুলো ভরাট করতে হবে। তরুণরা আসবে। হয়তো তারাও গ্রেপ্তার হবে। এভাবে কোনো দল চলতে পারে- বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, আপনি এই ধরনের সন্ত্রাসী কৌশল অল্পসময়ে জন্যই ব্যবহার করতে পারেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, এমন সংকটময় মুহূর্তেই ইমরানের সেরাটা বেরিয়ে আসতে পারে সামরিক চাপ থেকে বের হতে কোনো বিরাট পরিকল্পনা আছে কিনা? পিটিআই চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চায় বিবিসি।

ইমরান বলেন, আমি কেবল পুরো পরিস্থিতি দেখছি, অপেক্ষা করছি। হতে পারে, তারা আমাকে জেলে পাঠাবে। তাদের ধারণা হচ্ছে, আমি হয়তো হাল ছেড়ে দেব বা আমি পুরো ব্যাপারটা মেনে নেব এবং চুপ থাকব। তেমন কিছু হবে না। এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি ইমরান। তবে আদালত যদি পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করে সেক্ষেত্রে দলের প্রধান কে হবেন তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনি। ইমরানের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য হলো এই অবস্থায় দলের নেতৃত্ব দেবেন শাহ মেহমুদ কোরেশী।

ইমরানের আত্মবিশ্বাস : পিটিআই নেতাদের গণহারে দল ত্যাগ নিয়ে ইমরান খান বলেন, পরিস্থিতি খুব দ্রুত পাল্টে যাবে। আমি শিগগিরই বড় সারপ্রাইজ দিতে যাচ্ছি। তিনি দাবি করেন, কিছু দলীয় নেতা চাপের মুখে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আবার কিছু আছেন যাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে। এরপরেও আগামী নির্বাচনে পিটিআই জিতবে বলে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন ইমরান। তিনি বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার, অযোগ্য ঘোষণা এবং সর্বশেষ হত্যার পরিকল্পনা চলছে।

তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই। তার ভাষায়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো লড়াই নেই, এই সেনাবাহিনী আমার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য জোট সরকারকে দায়ী করেন। পাশাপাশি নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হবে না বলে তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন ইমরান খান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App