×

সম্পাদকীয়

ই-সিগারেটের প্রচারণা বাড়ছে : জনস্বার্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:৪৭ এএম

ই-সিগারেটের প্রচারণা বাড়ছে : জনস্বার্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি

বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান ৮ কারণের মধ্যে ৬টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। কোনোভাবেই ক্ষতিকর এই পণ্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ই-সিগারেট। সিগারেটের বিকল্প হিসেবে এলেও ই-সিগারেটে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। ব্যাটারিচালিত এই যন্ত্রে আসক্তি বেড়েছে তরুণদের। ব্যাটারির মাধ্যমে কার্টিজে থাকা নিকোটিন, স্বাদ ও গন্ধমিশ্রিত ই-লিকুইড ও প্রপিলিন গøাইকল নামক রাসায়নিক পুড়িয়ে মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে ই-সিগারেট। ই-সিগারেটে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ক্যান্সার ও ফুসফুসের রোগের জন্য দায়ী। সাধারণ সিগারেটের মতোই ই-সিগারেটে থাকে ক্ষতিকারক নিকোটিন। তামাক ব্যবহারকারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি ও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন, যা খুবই উদ্বেগজনক। দেশে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ২০২২ সালের শেষের দিকে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করা হলেও তার বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত তেমন দৃশ্যমান নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনাও দেন তিনি। সরকারের অঙ্গীকার থাকার পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ আটকে রয়েছে দীর্ঘ সময়। অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। তামাক কোম্পানিগুলো মানুষকে মরণ নেশায় উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও লোভনীয় প্রচারণা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকবিরোধী প্রচারণা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব ক্ষেত্রে জনসাধারণের বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করা দরকার। তামাকবিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্তকরণ এখন সময়ের দাবি। খসড়া সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। তামাক কোম্পানিগুলো কৌশলে তামাকের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেটের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। আমাদেরও তামাকসহ ই-সিগারেট বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু তামাকবিরোধী সংগঠন নয়, সর্বস্তরের মানুষ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তামাকমুক্ত দেশ গড়তে এর বিকল্প নেই। কোম্পানিগুলো সব সময়ই চেষ্টা করে তামাকের বিরুদ্ধে আইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যাতে না হয়। তাদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে রুখে দাঁড়াতেই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App