×

মুক্তচিন্তা

রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও পরমতসহিষ্ণুতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ১২:৪২ এএম

সাম্প্রতিক বিএনপির একজন নেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য জনসভায় মৃত্যুর হুমকি দিয়েছেন এবং এই বিষয়টি পুরো বিশ্বে ভাইরাল হয়েছে এবং এর জন্য তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতার এমন মন্তব্যের পর দেশের সচেতন নাগরিকসহ বাংলাদেশে অবস্থিত স্বয়ং মার্কিন দূতাবাস এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিএনপির এই নেতা এমন সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিলেন যখন দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। অবশ্য বিএনপির ওই নেতার এমন বক্তব্যে ওই দলেরও সবাই হতবাক হয়েছেন বলে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া থেকে খবর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিএনপির ওই নেতার এমন বক্তব্য খোদ বিএনপিকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সম্ভবত ওই নেতার বিরুদ্ধে শিগগিরই তারা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও পরমতসহিষ্ণুতা একটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের স্থিতিশীলতার জন্য অন্যতম প্রধান বিষয় হলেও মাঝেমাঝে রাজনীতিবিদদের অসহনশীল আচরণ এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং এতে দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘিœত হয়। একটি দেশের রাজনীতি সুস্থ ধারায় এগিয়ে নিতে হলে দেশের রাজনীতিবিদদের অত্যন্ত সহনশীল এবং বিচক্ষণ হতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হলে সব পক্ষের মতামতকে সম্মান জানাতে হবে। যে কারো কথার সঙ্গে, যে কারো মতের অমিল হতে পারে, তাই বলে এ মতের অমিল নিয়ে রাজনীতির মাঠে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে রাজনৈতিক অনুসারীদের প্রভাবিত করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা আমাদের কারো জন্য এটা সুখকর হতে পারে না। আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ করি রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা এমন বাহাসে লিপ্ত হয়, যা অনেক সময় রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যে দেশটির পেছনে জড়িয়ে রয়েছে অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস এবং যে দেশটির সৃষ্টির পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি এবং যিনি না হলে এদেশকে স্বাধীন করা ছিল প্রায় অসম্ভব, সেই অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং মহান জাতীয় সংসদসহ রাজনীতির মাঠে পরমতকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। জাতীয় সংসদে অনেক সময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মাইক দিতে হতো বলে স্বয়ং স্পিকার বিরক্তিবোধ করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো বিরক্ত হতেন না বরং সংসদ নেতা হিসেবে তিনি স্পিকারকে অনুরোধ করতেন বিরোধীদলীয় সদস্যদের মাইক দিতে। এসব ঘটনাবলি ছিল তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি একাত্ম হয়ে কাজ করার অনন্য নজির এবং পরমতকে শ্রদ্ধা জানানোর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এদেশে রাজনীতিতে শিষ্টাচার এবং পরমতসহিষ্ণুতা চরমভাবে অভাব দেখা দেয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর। ওই সময় থেকে দীর্ঘকাল খুনিরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এবং ওসব খুনিকে সঙ্গ দিয়েছে এদেশের আরো কিছু রাজনৈতিক দল। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে এসে তার পিতার আদর্শে রাজনীতি করে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ালেও তাকে বোমা নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল খুনিরা। ফলে বারবার এ দেশে কারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চায় তা চিহ্নিত। অতীতে যারা এদেশে রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং শিষ্টাচার কোনোদিন গ্রাহ্যই করেনি আজো তারা বারবার এদেশে রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখছেন না। একটি বিষয় হচ্ছে রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সব সময় রাজনীতির সহজ পথে যেতে হয়। যারা রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য চোরাগলি ব্যবহার করে তাদের কখনো ইতিহাস ক্ষমা করে না, যেমন করেনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের। তাই আমরা প্রত্যাশা করব সব রাজনৈতিক দল রাজনীতিতে শিষ্টাচার বজায় রেখে পরমতকে শ্রদ্ধা করবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App