×

শিক্ষা

ঢাবিতে জোবাইক ফেরার পরিকল্পনা আগস্টে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম

ঢাবিতে জোবাইক ফেরার পরিকল্পনা আগস্টে
ঢাবিতে জোবাইক ফেরার পরিকল্পনা আগস্টে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাবিতে জোবাইক ফেরার পরিকল্পনা আগস্টে

# সাইকেলে থাকবে নতুনত্ব # আগের নিবন্ধিতরা পাবেন পূর্বের টাকা # চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস # পুরোদমে চালু করতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ

আগামী আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে অ্যাপভিত্তিক সাইকেলসেবা ‘জোবাইক’ পুনরায় ফেরার পরিকল্পনা করছে। এই সেবা চালুর জন্য ইতোমধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জোবাইকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেদী রেজা এমনটিই জানিয়েছেন ভোরের কাগজকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে জানা যায়, সেবাটিতে ব্যবহৃত আগের সাইকেলগুলোর মেয়াদ ছিল তিন বছর। তবে ঢাবি ক্যাম্পাসে ‘ডিইউ চক্কর’ নামে এই সেবাটি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় এতে সবগুলো সাইকেলই ব্যবহারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তবে এবার নতুন সাইকেল দিয়েই সেবাটি চালু হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ফান্ডিং সমস্যা থাকায় ক্যাম্পাসে এতদিনে চালু করতে পারেনি সেবাটি। প্রতিষ্ঠানটি ফান্ডিংয়ের জন্য কাজ করছে। ফান্ড সংগ্রহে বেশ কিছুদূর অগ্রসরও হয়েছে। ইতোমধ্যে সাইকেল কেনার জন্য চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে কথাও বলেছে। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্যমতে আগামী ২০ জুনের মধ্যে ৭০-১০০টি সাইকেলের অর্ডার দেওয়া হবে। সাইকেলের অর্ডার দেওয়া হলে জুলাইয়ের শেষে সাইকেল চলে আসবে। এবং সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে আগামী আগস্ট মাসের শুরুতে ক্যাম্পাসে সেবাটি পুনরায় চালু হবে।

প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, জোবাইকের যে সফটওয়্যারটি রয়েছে সেটি নিয়েও কাজ শুরু করেছে টিমের একটি অংশ। নতুন এই সাইকেলগুলোতে আগের সাইকেলগুলো থেকে বেশ কিছু নতুনত্ব থাকবে। সাইকেলগুলোতে মোবাইল চার্জ দেওয়ার সুযোগ থাকবে। রাতে চলার জন্য সাইকেল হ্যাডলাইট থাকবে। এছাড়াও গঠনগত দিক থেকেও বেশ কিছুটা পরিবর্তন আসবে।

জোবাইকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসুর সমন্বয়ে ক্যাম্পাসে ১০০টি সাইকেল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জোবাইক যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৬০ দিন চালু ছিলো এই সেবা। অল্পদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সেবাটি। মোট আট হাজার ৬০০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সেবার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। মোট রাইড ছিলো এক লক্ষ ৮০ হাজার, প্রতিদিনের গড় রাইড ছিলো ১১২৫টি ও মোট সাড়ে চার লাখ কিলোমিটার রাস্তা রাইড করা হয়েছে এই সেবার মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, এই সেবায় শিক্ষার্থীরা ৭০ শতাংশ রিকশাভাড়া বাঁচাতে করতে পারতো।

এদিকে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলে দিলে পুনরায় সেবাটি চালু করতে গিয়েও ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। সেসময় জোবাইকের পাশাপাশি ই-বাইক চালুর পরিকল্পনাও করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাম্পাসে জোবাইকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে জোবাইক হলে আমাদের সময় ও গাড়ি ভাড়া দুটোতেই সাশ্রয় হবে। আমরা চাই সেবাটি পুনরায় চালু হোক।

ঢাবি ক্যাম্পাসে পুনরায় সেবাটি চালু করার বিষয়ে ভোরের কাগজকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মেহেদী রেজা বলেন, আমরা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেবাটি এতদিন বন্ধ রেখেছিলাম। ফান্ডিংয়ের অভাবে নতুন করে চালু করতে পারিনি। তবে জোবাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আমাদেরকে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ফান্ডিং নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আগামী জুনের ২০ তারিখের মধ্যে ৭০-১০০ টার মতো সাইকেল অর্ডার করতে পারবো। এরই মধ্যে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আশা করি সাইকেলগুলো জুলাইয়ের শেষে পেলে আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবাটি চালু করবো। যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল তাদেরকে টাকা ফেরত দেয়া হবে এছাড়াও পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবাটি চালু করার কথাও বলেন তিনি।

ফান্ডিং পেলে কাজগুলো আরো জোরেশোরে করা সম্ভব মন্তব্য করে সেবাটিকে আরো গতিশীল করতে বিভিন্ন. বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

জোবাইকের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে জোবাইকের এই সার্ভিসটা থাকা ভালো। এতে করে বিশেষত শিক্ষার্থীরা লাভবান হবেন। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতাও দিকটাও বাড়বে।

এর আগে ক্যাম্পাসের প্রতিটি আবাসিক হল, কার্জন হল, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জোবাইকের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে নিবন্ধিতরা এই সেবাটি গ্রহণ করতে পারতো। অত্যাধুনিক লক, সোলার প্যানেল, জিপিএস ইত্যাদি সুবিধা সমৃদ্ধ জোবাইকের এই সেবাটি নেওয়ার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে জোবাইকের নির্দিষ্ট বুথ থেকে নিবন্ধন করতে হতো। নিবন্ধনের সময় অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিফিল করা হতো।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলে জোবাইকের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করে সাইকেলের সঙ্গে থাকা লক খোলার সঙ্গে শুরু হতো সময় গণনা। গন্তব্যে পৌঁছে ব্যবহারকারী যখন সাইকেলটি স্ট্যান্ড করে পুনরায় লক করতেন তখন রাইডের সময় শেষ হতো। সাইকেল ব্যবহারের জন্য প্রথম ৫ মিনিটে গুনতে হতো ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং পরবর্তী প্রতি মিনিটের জন্য ৪০ পয়সা।

প্রসঙ্গত, প্রথমবারের মতো জোবাইক সেবাটি ২০১৮ সালে কক্সবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এর পরে এই সেবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়। এছাড়াও ঢাকার মিরপুর, গুলশান, বনানী ও বারিধারাতেও জোবাইকের সেবা চালু ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App