×

জাতীয়

মার্কিন ভিসানীতি : কৌশল পাল্টাবে বিএনপি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ১০:০৬ এএম

মার্কিন ভিসানীতি : কৌশল পাল্টাবে বিএনপি!

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে বেশ ফুরফুরে রয়েছেন বিএনপির নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে দেশে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরির তাগিদ থেকেই ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে, তারাই এর আওতায় পড়বে’- ভিসানীতিতে এমন কিছু ইঙ্গিতও ভাবিয়ে তুলছে দলটির নেতাদের। ফলে ঝুঁকি এড়াতে আগামীর ‘একদফা’ আন্দোলন নিয়ে ‘ভিন্ন কৌশল’ আঁটছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বৈঠকে নেতাদের আলোচনায় একই শঙ্কার কথা ঘুরেফিরে উঠে আসছে। সেটা হলো- আন্দোলনে সহিংসতা হলে তা ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা সৃষ্টি’ হিসেবে দেখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি নির্বাচন প্রতিহত করতে গেলেও বিপত্তি। বিধিনিষেধের আওতায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই ভিসানীতির সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়ে উল্টো যাতে বুমেরাং না হয় তা নিয়েই দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

বিএনপি শান্তির পথে, সুতারাং ভয় নেই : তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, বিএনপি শান্তির পথেই রয়েছে- সুতরাং ভিসা নীতি নিয়ে ভয় কিংবা বাড়তি কোনো চাপ নেই। নেতারা বলছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপি রাজপথে রয়েছে।

রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে সুষ্ঠু ভোটের দাবির পক্ষে মানুষের সমর্থন বাড়াতে চাইছে। কর্মসূচিতে বাধা এলে বিএনপির নেতাকর্মীরা শুধু প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। এর বেশি কিছু নয়। ভিসানীতি নিয়ে নেতাদের বক্তব্য- সরকার সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিধিনিষেধ এসেছে। পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনের যৌক্তিকতাও প্রমাণ হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করে, সে দায় সরকারের। আমরা বরাবরই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আছি। আমাদের ভয় কীসের? বিধিনিষেধ যাদের জন্য তারা বুঝবে। সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আমরা রাজপথেই থাকব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে রয়েছি এবং আগামীতে যে কর্মসূচি চলবে তাতে এই ভিসানীতি কোনো প্রভাব ফেলবে না। নির্বাচনের জন্য প্রধান বাধা সরকার; তাদের জন্যই এত নিয়মনীতি। এখানে বিরোধী দলের কী করার আছে? তিনি বলেন, আমাদের একদফার কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

জোরালো হচ্ছে ‘একদফার’ আওয়াজ : গত কয়েকদিন সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জোরালো বক্তব্যে উঠে এসেছে চলমান ১০ দফা দাবিকে একদফায় নামিয়ে আনা। আর সেটা হলো- ‘বর্তমান সরকারের পতন’। এমনকি নেতারা জোর গলায় বলছেন, সরকারের সময় শেষ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি মেনে পদত্যাগ না করলে খুব শিগগির পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে।

বিএনপি নেতাদের মতে, মুখে চিন্তিত নয় বললেও মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের উপলব্ধি- ভোটের আগ মুহূর্তে ভিসানীতি ঘোষণার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ‘আগ্রাসী ভাব’ কমে এসেছে। ভিসানীতিতে ব্যক্তির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি যুক্ত থাকায় আগামীতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর

ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরো কমে যাবে। সরকারও আগের মতো বাড়াবাড়ি করতে চাইবে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি আন্দোলনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রেখে যদি জমায়েত আরো বাড়ানো যায় তবে দাবি আদায়ের পথ আরো সুগম হবে।

আন্দোলন চলবে তবে ভিন্ন কৌশলে : সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবার কৌশল ও ধরন পাল্টানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির। হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে ‘কারফিউ’য়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি না করে একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামানোর মতো কর্মসূচি নিয়ে এবার মাঠে নামবে দলটি। একদফা সামনে রেখে আগামী কয়েক সপ্তাহ বিভাগীয় পর্যায়ে তরুণ সমাবেশসহ কিছু খুচরা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর ফাঁকে ঢাকার নেতারা প্রতিটি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কর্মসূচি সফলে মতবিনিময় করবেন। জুলাইয়ের মধ্যভাগে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি থাকবে। এ সমাবেশ থেকে নিরপেক্ষ ভোটের দাবি তুলে সরকারকে তা মানার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। পদযাত্রা কর্মসূচিও চলবে। এছাড়া পরিস্থিতি বুঝে সংসদ ভবন ঘেরাও ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে।

আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে নেতারা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সব জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠক থেকে সবাইকে দ্রুত একদফার আন্দোলনে নামতে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টাতে পারে কর্মসূচির ধরন : বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে সতর্কবার্তা হিসেবেই নিয়েই একদফা কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে শান্তিপূর্ণ আদলে। দলের কোনো আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধের আওতায় যাতে না পড়ে এমন সতর্কবার্তাও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে তৃণমূলে। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধ মেটাতে এবং বিরোধী দলের আন্দোলনে সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, মূলত এর ওপরই পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে।

সূত্র জানায়, দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর আন্দোলনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখার বিষয়ে আরো বেশি সতর্ক থাকার বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন নেতারা। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে এবং সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে- এমন প্রশ্নে পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ হবে তার প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলটিতে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বলেন, মার্কিন ভিসানীতির উসিলায় আন্দোলন থেমে যাবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া এ ঘটনায় বিএনপি নয় সরকার নিজেই ভয়ে আছে।

আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই সিনিয়র নেতার জবাব, আন্দোলনের কৌশল এখনই খোলাসা করা যাবে না। তবে কোন ঘটনায় আন্দোলন কীভাবে স্পার্ক করবে বলা যায় না। সরকারের আচরণ কী হবে তার ওপর আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন হবে। জনগণ রাজপথে নামতে উদ্বুদ্ধ হয় এমন কর্মসূচি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App