×

সম্পাদকীয়

পোশাক খাতের শঙ্কা কাটাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ০৫:৩৮ এএম

করোনা মহামারির পর তৈরি পোশাক খাত অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থগিত ও বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশও ফিরে এসেছিল। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। বৈশ্বিক সংকটে এখন আবার রপ্তানিমুখী কারখানায় কমছে ক্রয়াদেশ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ বাড়ছে কারখানায়। এসব কারণে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় ধুঁকছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। কিছুতেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা তৈরি পোশাক খাত। ক্রয়াদেশ কমেই চলছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রয়াদেশ কমেছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অর্ডার না থাকায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট অনেক কারখানা। সংকট মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করা উচিত বলে মনে করছি। দীর্ঘদিন ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি প্রচুর বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বিক্রি কমলে তার প্রভাবও এ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দরপতন, অর্ডার স্বল্পতা, মূল্য কম, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির হুঁশিয়ারি, সব শিল্পে পেমেন্ট ইনসিকিউরডসহ রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। এছাড়া সুতা ও কেমিক্যালের মূল্যবৃদ্ধি, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। পোশাকশিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। জ¦ালানি সংকট নিরসন, উৎপাদন ব্যয় কমাতে সৌরশক্তির মতো বিকল্প উপায় কাজে লাগাতে হবে। পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের প্রণোদনা ও সহায়তা জরুরি। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা রয়েছে, তা আরো বাড়ানো দরকার। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেদ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বে পোশাকের বাজার এখন ৬৫০ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশ এর মাত্র ৫ শতাংশ সরবরাহ করে। এ হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে পারলেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। এই টার্গেট পূরণে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App