×

আন্তর্জাতিক

তুর্কিরা এরদোগানকেই কেন বেছে নিলেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ১০:২০ পিএম

তুর্কিরা এরদোগানকেই কেন বেছে নিলেন?

ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত দেশ তুরস্কের নেতা হিসেবে আরো পাঁচ বছর থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।

রবিবার (২৯ মে) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও দুই সপ্তাহ আগে প্রথম রাউন্ডে অল্প ভোটের কারণে বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হন তিনি। খবর বিবিসির।

দুই দশক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর ও এক ডজনেরও বেশি নির্বাচনের পর, তুরস্কের নেতা এরদোগান জানেন কীভাবে সবকিছু সামাল দিতে হয়। ইস্তাম্বুলে ট্যাক্সিচালকদের এক সম্মেলনে তাকে কাছে পেয়েও মানুষের যেন আশ মিটছিল না।

অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের মতোই তিনি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার ইশারা মতো ট্যাক্সি ড্রাইভাররা উল্লাস করছিলেন, হাততালি দিচ্ছিলেন। সম্মেলনের স্থানটি ছিল বসফরাসের উপকূলে ইস্তাম্বুলের একটি কনভেনশন সেন্টার, যেটি নির্মিত হয়েছিল এরদোগান ওই শহরের মেয়র থাকাকালীন সময়ে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট যখন তার ভাষণ শেষ করেন, সমাবেশের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে, ততক্ষণে অনেক বয়স্ক ড্রাইভার উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলছিলেন ওপরের দিকে, কিংবা হাত তুলে প্রেসিডেন্টকে স্যালুট করছিলেন।

মাথায় স্কার্ফ আর রক্ষণশীল পোশাক পরে আয়েশে ওজদোয়ান ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন তার ট্যাক্সি ড্রাইভার স্বামীর সঙ্গে।

তার নেতার ভাষণের প্রতিটি শব্দ যাতে তিনি শুনতে পান সে জন্য বেশ আগেই সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন। সিটের পাশে ছিল একটি ক্র্যাচ। তার হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু তারপরও তিনি ওই সমাবেশে না গিয়ে থাকতে পারেননি।

‘এরদোগান আমার কাছে সবকিছু’ বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলছিলেন তিনি। ‘আমরা আগে হাসপাতালে যেতে পারতাম না, কিন্তু এখন আমরা সহজেই সেবা পাই। আমাদের এখন পরিবহন ব্যবস্থা আছে। তিনি রাস্তাঘাট উন্নত করেছেন। মসজিদ নির্মাণ করেছেন। দ্রুত গতির ট্রেন আর পাতাল রেল দিয়ে তিনি দেশকে উন্নত করেছেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভাষণে জাতীয়তাবাদী বক্তব্য ছিল ওই সমাবেশের অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। এদেরই একজন হলেন ৫৮ বছর বয়সের কাদির কাভলিওলু, যিনি গত ৪০ বছর ধরে মিনিবাস চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, যেহেতু আমরা আমাদের মাতৃভূমি ও জাতিকে ভালোবাসি, তাই আমরা দৃঢ়ভাবেই প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছি। আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ুক কিংবা কমুক। প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তার সঙ্গে আছি। আমার প্রিয় রাষ্ট্রপতিই আমাদের আশা-ভরসা।

চলতি মাসের শুরুতে তুর্কি ভোটাররা যখন নির্বাচনে ভোট দিতে গেছিলেন, সে সময় তারা তাদের মানিব্যাগের অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভোট দেননি। তুরস্কে খাবারের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। ৪৩ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির কারণে অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয়।

এই অবস্থার পরও প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, যিনি তুরস্কের অর্থনীতি ও বাকি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন, ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

এ ঘটনায় বিশ্লেষকরা বেকুব বনে গেছেন ও গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা লাভ করেছেন যে ‘জনমত জরিপের ফলাফল থেকে সাবধান।’

প্রশ্ন হলো, তুরস্কের অর্থনীতিতে এক বড় সংকট থাকার পরও কেন বেশিরভাগ ভোটার এরদোগানকেই বেছে নিলেন?

গত ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে বিপর্যয়কর জোড়া ভূমিকম্প, যাতে অন্তত ৫০ হাজার বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল, সেই ভূমিকম্প মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনার পরও ভোটাররা কেন তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন না?

ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সোলি ওজেল বলেন, আমি মনে করি তিনি একজন চূড়ান্ত ‘টেফলন রাজনীতিবিদ’ (কোনো অভিযোগ যার গায়ে বসতে পারে না)। তার যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তার শরীর থেকে ক্ষমতার আভা বের হয়। এটা এমন এক জিনিস যা কিলিচদারোগ্লুর নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App