×

আন্তর্জাতিক

এরদোগানের কাছ থেকে এখন যা আশা করা যায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ১০:৫০ পিএম

এরদোগানের কাছ থেকে এখন যা আশা করা যায়

ছবি: সংগৃহীত

বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান রবিবার (২৮ মে) রাতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের হর্ষধ্বনির জবাবে কিছুটা বেসুরো গলায় গান গাইলেও, নির্বাচনের হিসাব-নিকাশে প্রায় নিখুঁত ছিলেন তিনি।

মতামত জরিপ বোদ্ধা অথবা নির্বাচন বিশ্লেষকদের তুলনায় তিনি ভোটারদের মনোভাব খুব ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এরদোগান বিরোধীদের কাছে হেরে যাবেন। অন্তত এবার আর সেটা হচ্ছে না। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলুর সঙ্গে তার পাওয়া ভোটের ব্যাবধান মাত্র চার শতাংশ। সন্দেহ নেই যে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান তৃতীয় মেয়াদে শাসন শুরু করলে হয়তো তার প্রতিফলন দেখা যাবে। খবর বিবিসির।

ন্যাটোভূক্ত ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্কের নাগরিকেরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। বেশিরভাগ ভোটার আরো এক মেয়াদে স্বৈরশাসনের অধীনে থাকতে রাজি, কিন্তু তারা মি. কুলুচদারুলুর মতো অপরীক্ষিত গণতান্ত্রিক শাসনে থাকতে রাজি নয়।

বিরোধী নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেকে ‘মিস্টার নাইস গাই’ বা ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি তুরস্কের জন্য নতুন বসন্তের অঙ্গীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কিছুটা ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।

এতে তিনি জাতীয়তাবাদী ভোটারদের কাছ থেকে হয়তো কিছু বাড়তি ভোট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নির্বাচনে জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। তুরস্কের ইসলামপন্থি নেতা এরদোগানের সঙ্গে তার সমর্থকদের সম্পর্কের বয়স অন্তত ২০ বছরের পুরনো। অনেকেই তার মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল। তারা এরদোগানের ভালো ও খারাপ সবসময়ই সমর্থন দিয়ে গেছে ও অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও তাকে আরো পাঁচ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করেছে।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর পর রাজধানী আঙ্কারার রাস্তা উৎসবের শহর হয়ে ওঠে- মূহূর্তেই শহরটি যেন তুর্কি পতাকার ক্যালাইডোস্কোপে পরিণত হয়, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সড়কে উল্লাস করেন এরদোগানের সমর্থকরা।

অনেক সমর্থক এরদোগানের এক হাজার কক্ষের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের বাইরে গিয়ে জড়ো হয়। বিরোধী নেতা এই রাজপ্রাসাদকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

৫০ বছর বয়সের হাতিস দুরান, স্কার্ফের নিচ থেকে যিনি হাসছিলেন, বলেন, আমরা ধন্য হয়েছি যে আমাদের প্রেসিডেন্ট আবার আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। এর চেয়ে বড় আর কোন আনন্দ হয় না। তিনি হচ্ছেন সেই নেতা যিনি পুরো বিশ্বকে অবজ্ঞা করেছিলেন ও পুরো বিশ্বকে শিক্ষা দিয়েছেন।

এখানেই তার আকর্ষণের একটি মূল জায়গা- এরদোগান একজন শক্তিশালী নেতা, আগামী দিনের সুলতান, যিনি কারো কাছে মাথা নত করেন না। নির্বাচন থেকে পাওয়া বার্তা হচ্ছে, মানুষ প্রকৃতপক্ষে ভালো মানুষের তুলনায় কঠোর একজন মানুষকে বেশি পছন্দ করে। এখন তিনি নতুন করে উজ্জীবিত। দেশটির বিরোধীদল বাজেভাবে পর্যুদস্ত ও ক্রেমলিন এই জয় উদযাপন করছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের ফলই চেয়েছিলেন ও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে তিনিই প্রথম নেতা যিনি তুরস্কের নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার জন্য পুতিন সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন, যার মধ্যে আছে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া। নির্বাচনে এরদোগান অনেক বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন- নগর এলাকায় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, জনগণের সান্নিধ্য ও দেশের ৯০ শতাংশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, শুধুমাত্র তুরস্ক জয়ী হয়েছে- কিন্তু বিরোধী দল বা এলজিবিটিকিউ (সমকামী বা রূপান্তরকামী) সম্প্রদায়কে আক্রমণ করতে এরদোগান সময় নষ্ট করেননি।

আগামী বছরগুলোতে দেশটিতে এই দুই সম্প্রদায়ই আগের চেয়ে বেশি টার্গেটে পরিণত হতে পারে এবং মানবাধিকার ও স্বাধীন মত প্রকাশ আরো বেশি ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষমতার ভারসাম্য আগের চাইতে কম থাকবে, আর সংযমী আচরণের জন্য তুরস্কের দীর্ঘস্থায়ী এ শাসকের সুনাম আছে বলে কেউ জানেন না। ফলে যারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন, প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোটার, তারা হতাশায় পড়বেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ভয়ে থাকবেন।

অনেকে মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ এই প্রজাতন্ত্রে এখন ধর্মচর্চা বেশি হবে ও জনজীবনে স্বাধীনতা কমে যাবে। চলতি বছরের অক্টোবরে তুরস্ক তার প্রতিষ্ঠান শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করবে। তুরস্ক এখন ভগ্ন অর্থনীতির বিভক্ত একটি দেশ। সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের হাতে এর কোনো সমাধান নেই। আর যদি বলেন নির্বাচনের ফলাফল তুরস্কের প্রতিবেশী ও তার ন্যাটো মিত্রদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? তারা সজাগ থাকবেন, এজন্য যে তারা জানেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলার ব্যত্যয় করতে পছন্দ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App