×

মুক্তচিন্তা

অর্থবহ অর্থবছর স্মার্ট গভর্নেন্সের অনুঘটক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ০৫:৩৬ এএম

‘অর্থবছর’ ধারণাটি বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইতিহাসে প্রাচীন বা মধ্যযুগে বাজেট বা অর্থবছর বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া না গেলেও আধুনিক যুগে অর্থবছর এবং বাজেট রাষ্ট্র পরিচালনায় জনপ্রিয় ধারণা। অর্থবছর হচ্ছে এক বছরে একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যা দ্বারা সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের নির্দেশনা বোঝায়। এতে জনগণ রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় সম্পর্কে জানতে পারে। বছরের শুরু-শেষ পরিবর্তন করতে না পারলেও অর্থবছরের বিষয়টি পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ কোনো রাষ্ট্র তার সুবিধাজনক সময়কে অর্থবছর হিসেবে নির্ধারণ করে নিতে পারে। গত কয়েক দশকে বহু দেশ প্রয়োজন অনুযায়ী এটি পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশে এখনো পাকিস্তান আমল থেকে পাওয়া অর্থবছরই অনুসরণ করছে। এক বছরের ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছর ধরা হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের অর্থবছর মোগল যুগ, ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এপ্রিল-মার্চ হলেও ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি শাসকদের একচ্ছত্র সিদ্ধান্তেই প্রবর্তিত হয় জুলাই-জুন অর্থবছর। বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন প্রয়াসে জাতীয় বাজেটকেন্দ্রিক মতবিনিময় সভাগুলোতে আলোচনায় অর্থবছরের মেয়াদ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব আসে কয়েকবার। উপযুক্ত কারণ পরীক্ষা-পর্যালোচনা করে এটি পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণের আবশ্যকতা অনুভূত হয়। এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। সে সঙ্গে বাংলা বর্ষকে কেন্দ্র করার কথা ভাবা হলেও সেই চিন্তা-ভাবনা আর বাস্তবতায় রূপ পায়নি। বাংলাদেশের মৌসুমি আবহাওয়া ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বার্ষিক কর্মযোজনার নিরিখে এটা খুব স্পষ্ট, জুলাই-জুন অর্থবছর হতে পারে না। আমাদের দেশে মূলত মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর অবধি বৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে অর্থবছর জুলাই-জুন। এতে দেখা যায়, অর্থবছরের শেষে বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ শেষ করার তাগিদে কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানোর তাগিদে এবং ঠিকাদাররা বিল পেতে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার জন্য মে-জুন মাসে দেশজুড়ে শুরু করে খোঁড়াখুঁড়ি। শহরে পানির লাইন, সুয়ারেজ লাইন, নতুন রাস্তা, রাস্তা সংস্কারের কাজে খুব তড়িঘড়ি করে। গ্রামে দেখা যায়, মে-জুন মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাঁচা রাস্তায় নতুন মাটি দিয়ে সংস্কার কিংবা নতুন রাস্তা নির্মাণকাজ করায় বৃষ্টির পানিতে রাস্তা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে যে শুধু চরম ভোগান্তি পেতে হয় তা নয়, কাজটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এতে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের আর্থিক অপচয় হয়। শুধু কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অর্থবছরের বর্ষার ৪-৫টি মাস অর্থনীতির জন্য অনুকূল না হয়ে প্রতিকূল হয়ে ওঠে। মহান স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এমন প্রতিকূল একটি প্রথা প্রচলিত এবং বহালতবিয়তে আছে, যা শুধু নাগরিকদের কাছে অগ্রহণযোগ্য তা নয়, উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায়। এ বিষয় নিয়ে অনেকেই আওয়াজ তুলেছে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে সফল হওয়া সম্ভব এবং তা উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা তথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রয়োজনেই করা উচিত। স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ‘স্মার্ট গভর্নেন্স (ঝসধৎঃ এড়াবৎহধহপব)’। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের উন্নয়নে সরকার ঘোষিত বাজেটের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকবে অর্থাৎ বাজেটের সঠিক ব্যবহার হবে। বাজেট/প্রকল্পের অপচয় রোধ এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাক্কলিত বাজেটে কাজ শেষ করাই স্মার্ট গভর্নেন্সের মূল ধারণায় বলা হয়েছে। মোদ্দাকথায়, অর্থবহ অর্থবছর স্মার্ট গভর্নেন্সের অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। অর্থবছর পুনর্নির্ধারণ করা হলে যে বিশাল অঙ্কের টাকা অপচয় হতো, তা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মো. বেলায়েত হোসেন : সহকারী তথ্য অফিসার, তথ্য অফিস রামগড়, খাগড়াছড়ি। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App