×

সারাদেশ

৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৩, ১১:৪৯ এএম

৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী ও গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানের বিরুদ্ধে আমন ধান সংগ্রহের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার দুই বছর পর অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম।

তবেও তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হওয়ায় একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ইতিমধ্যে বেশ তৎপর হয়ে পরেছে। দেড়’শ মেট্রিক টন আমন ধান লোপাটের সাথে খাদ্য ব্যবসায়ী একাধিক চক্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাড়াশ খাদ্য গুদাম ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, তাড়াশ খাদ্য গুদামে ২০২১-২২ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ আমন ধান সংগ্রহের জন্য প্রথম পর্যায়ে বরাদ্ধ দেওয়া পায় ৪ শত ৭৪ মেট্রিক টন। যথারীতি লক্ষমাত্রা অনুসারে আমন সংগ্রহ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে আরো অতিরিক্ত দেড়’শ মেট্রিক টন আমন সংগ্রহ নিয়ে।

ওই সময় তাড়াশ খাদ্য গুদামে ওসিএল এসডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোঃ কাওছার রহমান, নিরাপত্তাকর্মী ফারুক মোল্লা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইয়াসিন আলী ও অন্যান্য কর্মচারী। স্থানীয় খাদ্য ব্যবসায়ী চক্র মিলে বিধিবহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত ৫০ জন কৃষকের বিপরীতে দেড়’শ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ দেখান।

তাড়াশ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি কাওছার রহমান বর্তমানে বদলি হয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) হিসেবে কর্মরত আছেন।

তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি ও অন্যান্য কর্মচারী যোগসাজসে ওই সময অতিরিক্ত দেড়’শ মেট্রিক আমন ধান সংগ্রহ না করেই স্থানীয় ব্যবসায়ী চক্রের সাথে প্রতি টন ২৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে। যার মোট টাকা দাড়ায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার। উক্ত টাকা উত্তোলনের জন্য ‘জনতা ব্যাংক’ তাড়াশ শাখা থেকে ৫০জন ভুয়া কৃষকের কৃষি কার্ডের বিপরীতে ৪০লাখ, ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা ও উপজেলা খাদ্য গুদামের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী অতিরিক্ত দেড়’শ টন আমনের পুনর্ভরণ বিলের চিঠি দিলেও তিনি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক সাক্ষর করেননি বলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী দাবি করেন। তবে তিনি চিঠি দিয়ে ভুল করলেও চেকে কোনো সাক্ষর করেননি।

মোটা অংকের বিলের একটি চেক বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই ছাড়াই টাকা ছাড় করল বিষয়টি কেমন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সরেজমিন তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহীম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই। বিষয়টি পুরাতন বলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

এ ব্যপারে তদন্ত কমিটির প্রধান মুহাম্মদ তানভীর রহমানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর তার নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে দিলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য মো. নিয়ামুল হক বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে তদন্ত কমিটি তদন্ত করার পরপরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পরে লেগেছে। তারা সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা ও তদবির চালাচ্ছেন।

খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানের কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ আইনাগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, তাড়াশ খাদ্য গুদামের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তির কারণে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর তাড়াশ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। বর্তমান তার বিরুদ্ধে একাধিক বিভাগীয় অভিযোগ তদন্ত চলমান রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App